
এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইয়ে গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারিয়ে (১-০) বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মনে আনন্দ দিয়েছেন খেলোয়াড়রা। ২২ বছর অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। ঢাকা স্টেডিয়াম থেকে ২২ হাজার দর্শক আনন্দ মনে বেরিয়ে গেছেন। অনেক দিন এমন আনন্দ ফুটবল দর্শকের মধ্যে দেখা যায়নি। দুই দেশই এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। তারপরও দুই দেশের লড়াই দুই দেশের ফুটবলপ্রেমীদের মনে আলাদা জায়গা করে নেয়।
এমন আনন্দের রাতে ঘুম হয়নি অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার। এমন আনন্দের দিনেও মন ভালো নেই জামালের। ‘ঘুম হইছে অল্প। মন খারাপ, নানা মন ভালো, ভালো আছে’- বলছিলেন জামাল। মন খারাপ কেন? খেলতে না পারার কারণে? ‘অফকোর্স, এটা তো ট্রু, খুব স্বাভাবিক তাই না। এমন একটা ম্যাচে কে না খেলতে চায়। আমি ক্যাপ্টেন। আমি তো অবশ্যই খেলতে চাইবো। আমি নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ খেলছি না। শেষ ৫ মিনিট খেলিনি। ভুটানের বিপক্ষে হামজার প্রথম গোলে আমি অ্যাসিস্ট করেছি। হংকংয়ের বিপক্ষে আমি মাঠে নামার পর খেলা চেঞ্জ হয়ে গেছিল। নেপালের বিপক্ষে গোল করিয়েছি। আমি তো মনে করেছি, ভারতের বিপক্ষেও খেলবো।’

জামাল ধরে নিয়েছিলেন ১৩ নভেম্বর নেপালের বিপক্ষে একাদশে খেলেছেন, ভারতের বিপক্ষে একাদশে থাকবেন। একাদশ তো দূরের কথা কোচ কাবরেরা জামালকে বদলি খেলতেও নামাননি। জামাল ডাগআউটে বসে দাঁত কামড়াচ্ছিলেন। মুষ্টিবদ্ধ হাত বার বার নিজের উরুর ওপর পাঞ্চ করছিলেন। মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন কোচ ডাকলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন। তাজ উদ্দিন, শাকিল আহাদ তপু, শাহরিয়ার ইমনরা মাঠে নামলেন। কিন্তু জামালের দিকে নাকি ফিরেও তাকাননি কোচ।
কোচের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে জামাল বলেন, ‘কেন কথা বলবো। কোচ কেন নামায়নি সেটা কোচ বলতে পারবেন। কোচ মনে হয় প্রেস কনফারেন্সে একটু রাগ হইছে। আমি জানি না কার ওপর রাগ হইছে। আপনারা ডাইরেক্ট পারসোনাল প্রশ্ন করছেন না।’ সাংবাদিকরা তো প্রশ্ন করবেই। ‘ও তো (কোচ) মানতে পারে না। তোমরা সাংবাদিকরা আক্রমণ করে কোচকে চেতায় দিছ। এতো প্রশ্ন করো কেন…হা হা হা।’
ঘুম হয়নি কেন, ‘কীভাবে ঘুম হবে, মনে করছিলাম খেলমু। নেপালের বিপক্ষে একাদশে খেলার পর আত্মবিশ্বাস বেড়ে গিয়েছিল। নেপালের বিপক্ষে হামজার বাইসাইকেল কিকের গোল আলোড়ন তুলে ছিল। সেই গোলের যোগানদাতা ছিলেন জামাল। দুর্দান্ত একটা পাস দিয়েছিলেন তিনি। কোচও খুশি হয়েছিলেন। কোচের হাত ধরে ভারত ম্যাচের সংবাদ সম্মেলনে গিয়েছিলেন জামাল। সেখানেও জামাল বলছিলেন তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় ম্যাচ খেলবেন। জামাল বলেছিলেন, যদি কোনো কারণে খেলা না হয় তাহলে মন খারাপ হবে।
বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছে, কিন্তু জামাল খেলেনি। জয়ের জন্য জামালের মন ভালো, আবার নিজে খেলতে না পারার কারণে মনটাও খারাপ। মেনে নিতে পারছেন না একটা মিনিটের জন্যও তাকে নামাননি কোচ।

গতকাল সারা দিন নানা কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কোথাও গিয়ে মন থেকে হাসতে পারেননি। মন ভালো রাখার জন্য মুখে হাসি রাখতে হয়েছে। জামাল ভূঁইয়া গতকাল বিকালে হোন্ডা কেম্পানির একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানেও তার মুখ ভার ছিল। ‘খেললে আরও মন ভালো থাকতো। আমার মন খারাপ হইলেও দেশ জিতছে। আমরা খুশি। আমারা সবাই জিতছি। এটাও সত্য কথা অ্যান্ড অফ দ্য ডে আমি তো খেলতে চাই।’
হাসান আল মামুন জাতীয় দলের সহকারী কোচ। ২০০৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলের ফুটবলার ছিলেন তিনি। জামালদেরকে সব সময় বলতেন তারা ভারতকে হারিয়েছিলেন। তোমরা পারছ না। জামাল বলেন, ‘মামুনকে চুপ করিয়ে দিয়েছি। আর বলতে পারবে না।’ ভারতকে হারিয়েছি, সবাই খুশি। দিন শেষে আমরা তো আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারিনি।’