
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) হোয়াইট হাউসে মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের নেতাদের আতিথ্য দেবেন। দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার আধিপত্য এবং ক্রমবর্ধমানভাবে চীনা-আকৃষ্ট অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্য এশিয়ার বিশাল খনিজ সম্পদের জন্য তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, পশ্চিমা দেশগুলো মস্কো এবং বেইজিং থেকে দূরে সরবরাহ শৃঙ্খলকে বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, জ্বালানি সরবরাহ এবং ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের এড়িয়ে স্থলপথে বাণিজ্য রুট খুঁজতে নতুন অংশীদারিত্বের চেষ্টা করছে।
আলোচনা হবে মূলত ২০১৫ সালে চালু হওয়া তথাকথিত ‘C5+1’ প্ল্যাটফর্মের নেতাদের – যেখানে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাঁচটি মধ্য এশীয় রাষ্ট্র – কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান এবং উজবেকিস্তান রয়েছে। অর্থনৈতিক, জ্বালানি এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা এগিয়ে নিতে এই প্ল্যাটফর্মের উদ্ভুব। তাদের নেতারা বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে একটি নৈশভোজেও যোগ দেবেন।
সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের পরিচালক গ্রেসলিন বাসকরণ বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সরকারে-সরকারে সম্পৃক্ততা বজায় রাখবে এবং বাণিজ্যিক চুক্তি করবে। এতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত হবে।
বাসকরণ বলেন, ‘চীন ও রাশিয়া যখন এই অঞ্চলের খনি এবং অবকাঠামো ব্যবস্থার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করছে, তখন ওয়াশিংটন কিছু লক্ষ্য নিয়ে কৌশলগত প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে একটি বাস্তব অবস্থান তৈরি করতে চাইছে।’
খনিজ ও জ্বালানি সমৃদ্ধ পাঁচটি দেশই অর্থনৈতিকভাবে প্রাক্তন সোভিয়েত শাসক রাশিয়ার সঙ্গে আবদ্ধ। অন্যদিকে প্রতিবেশী চীন বৃহৎ পরিসরে অবকাঠামো এবং খনির বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করেছে।
একসঙ্গে দেশগুলো প্রায় ৮৪ মিলিয়ন মানুষের আবাসস্থল। তাদের কাছে ইউরেনিয়াম, তামা, সোনা, বিরল মৃত্তিকা ও অন্যান্য কৌশলগত খনিজ পদার্থের বিশাল মজুদ রয়েছে। এগুলো সবুজ শক্তির দিকে রূপান্তরের বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টার জন্য অপরিহার্য।
এই অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ কাজাখস্তান বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী উৎপাদনের প্রায় ৪০% এই দেশ উৎপাদন করে। উজবেকিস্তানও ইউরেনিয়াম সরবরাহকারী হিসেবে শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে। একসঙ্গে বিশ্বের ইউরেনিয়াম উৎপাদনের অর্ধেকেরও দেশ দুটি থেকে আসে।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, বিদ্যুতেরও গুরুত্বপূর্ণ উৎস। রাশিয়া এখনো যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা ইউরেনিয়ামের প্রায় ২০% সরবরাহ করে।
রয়টার্স বলছে, ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ সুরক্ষিত করতে এবং চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে বহুমুখী কৌশল অনুসরণ করেছে। চীন মাঝে মাঝে রপ্তানি সীমিত করে তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। এটি বিকল্প উৎস খুঁজতে ওয়াশিংটনকে উদ্বুদ্ধ করছে।