
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনিজুয়েলাকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, দেশটি যদি অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ‘বন্দি’ ও ‘মানসিক প্রতিষ্ঠান থেকে আসা লোকদের’ ফিরিয়ে না নেয়, তবে ভেনিজুয়েলাকে ভয়াবহ ‘পরিণতি ভোগ’ করতে হবে। খবর আল জাজিরার।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) নিজস্ব সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘তাদের এখনই আমাদের দেশ থেকে বের করে নিন, অন্যথায় আপনারা যে মূল্য দেবেন তা হবে ভয়াবহ।’ তবে তিনি তার অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি। ট্রাম্পের দাবি, ভেনিজুয়েলা ইচ্ছাকৃতভাবে এসব মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে এবং তাদের কারণে ‘হাজার হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছে, এমনকি নিহতও হয়েছে।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এর ঠিক একদিন আগে তিনি ক্যারিবিয়ান সাগরে ভেনিজুয়েলার একটি কথিত মাদক পাচারকারী জাহাজে নতুন হামলার ঘোষণা দেন। সেই হামলায় তার ভাষায় ‘পুরুষ মাদক সন্ত্রাসী’ তিনজন নিহত হয়। ভেনিজুয়েলা এই পদক্ষেপকে ক্যারিবিয়ানে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং জাতিসংঘের কাছে আনুষ্ঠানিক তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে। চলতি সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে এ ধরনের অন্তত তিনটি হামলায় মোট ১৭ জন নিহত হয়েছে।
ওয়াশিংটন ইতোমধ্যেই ভেনিজুয়েলার উপকূলবর্তী আন্তর্জাতিক জলসীমায় সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং এফ-৩৫ স্টিলথ ফাইটার মোতায়েন করেছে। এটিকে ক্যারিবিয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় নৌ মোতায়েন বলে মনে করা হচ্ছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই সামরিক অভিযান মাদকবিরোধী কার্যক্রমের অংশ। তবে তিনি এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেননি যে, যেসব নৌকাকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে, সেগুলো সত্যিই মাদক পরিবহন করছিল।
আইনি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এসব হামলা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সামরিক উপস্থিতি ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরে হামলার আশঙ্কাও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করছে। যদিও ট্রাম্প সম্প্রতি সরকার পরিবর্তনের আগ্রহ অস্বীকার করেছেন, তবুও গত মাসে ওয়াশিংটন মাদুরোর গ্রেপ্তারের পুরস্কার দ্বিগুণ করে ৫০ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করেছে। মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা হুমকি দিয়েছেন, চার মিলিয়নেরও বেশি মিলিশিয়া একত্রিত করবেন যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মোকাবিলায়।
রয়টার্স জানিয়েছে, এই মাসের শুরুতে ভেনিজুয়েলার এক নৌকায় প্রথম মার্কিন হামলার অল্প কিছুদিন পরেই মাদুরো সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দেন। রয়টার্স ট্রাম্পের উদ্দেশে পাঠানো মাদুরোর একটি ব্যক্তিগত চিঠি দেখেছে। সেখানে তিনি লেখেন, ‘প্রেসিডেন্ট, আমি আশা করি আমরা একসঙ্গে সেই মিথ্যাগুলোকে পরাজিত করতে পারব, যা আমাদের সম্পর্ককে কলুষিত করেছে। আমাদের সম্পর্ক হওয়া উচিত ছিল ঐতিহাসিক ও শান্তিপূর্ণ।’ তিনি আরও আহ্বান জানান, ‘মিডিয়ার কোলাহল ও ভুয়া খবর পেরিয়ে আমাদের সরাসরি ও আন্তরিকভাবে আলোচনায় বসা উচিত।’
এদিকে, শনিবার হঠাৎ করেই মাদুরোর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল অদৃশ্য হয়ে যায়। এএফপি টেলিসুরকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ‘কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা ছাড়াই চ্যানেলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, এমন এক সময়ে যখন যুক্তরাষ্ট্র ভেনিজুয়েলার বিরুদ্ধে হাইব্রিড যুদ্ধ চালাচ্ছে।’
সূত্র: আল জাজিরা