
সাম্প্রতিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হলেও তা মূলত পুরুষদের কেন্দ্র করেই পরিচালিত হচ্ছে। ধর্মীয় বিধিনিষেধের কারণে নারী ভিকটিমরা মারাত্মকভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
গত ৩১ আগস্ট রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় কুনার প্রদেশে প্রথমে ৬ মাত্রার ভূমিকম্প এবং পরে ৫.২ ও ৪.৫ মাত্রার দুটি আফটারশক আঘাত হানে। ভূপৃষ্ঠের অগভীর অঞ্চলে হওয়া এ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ২০০ জন নিহত, ৩ হাজার ১২৪ জন আহত এবং প্রায় ৬ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। নিহত ও আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
তবে অভিযোগ রয়েছে, উদ্ধারকর্মীরা প্রায় একচেটিয়াভাবে কেবল পুরুষদের উদ্ধার করছেন। নারী ও ১০ বছরের বেশি বয়সী মেয়ে শিশুরা কার্যত উপেক্ষিত। যদিও সরকারি পর্যায়ে নারী ও কন্যাশিশুদের উদ্ধারে কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি, বাস্তবে তাদের উদ্ধার হার পুরুষদের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কম।
আফগান নারী অধিকারকর্মী ফাতেমেহ রেজায়ি জানান, তালেবান শাসনে অপরিচিত নারী-পুরুষের শারীরিক সংস্পর্শ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। ভূমিকম্পের মতো জরুরি পরিস্থিতিতেও এ বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়নি। ফলে পুরুষ উদ্ধারকর্মীরা নারীদের স্পর্শ করতে ভয় পাচ্ছেন, কারণ এতে ধর্মীয় ও সামাজিক শাস্তির আশঙ্কা রয়েছে।
রেজায়ি জার্মান সংবাদমাধ্যম ডিডব্লিউকে বলেন, ‘পরিবারগুলো অনেক ক্ষেত্রে অনুমতি দেয় না যে অপরিচিত কোনো পুরুষ তাদের নারী সদস্যকে উদ্ধার করবে। বরং তারা চাইছে পরিবারের পুরুষ সদস্যরা নিজেরাই উদ্ধার কার্যক্রম চালাক।’
অল্পসংখ্যক নারী ও কন্যাশিশু পরিবারের সহায়তায় উদ্ধার হলেও কঠোর পর্দাপ্রথার কারণে তাদের অধিকাংশকে হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। কারণ হাসপাতালগুলোতে বেশিরভাগ চিকিৎসক পুরুষ।
ভূমিকম্পের পর আহতদের কুনার ও পার্শ্ববর্তী নানগারহার প্রদেশের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নারী চিকিৎসকের চরম সংকটের কারণে আহত নারীরা চিকিৎসা পাচ্ছেন না।
নারী চিকিৎসক জাহরা হাগপারাস্ত ডিডব্লিউকে জানান, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে যে শত শত নারী নিহত ও আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেক গর্ভবতী নারীও আছেন, কিন্তু চিকিৎসার অভাবে তারা মারাত্মক ঝুঁকিতে আছেন।’
২০২১ সালে তালেবান দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতা দখলের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্র থেকে নারীদের বিতাড়ন শুরু করে। গত তিন বছরে বহু নারী চিকিৎসক চাকরিচ্যুত ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। জাহরা হাগপারাস্তও তালেবান সরকারের হাতে চাকরি হারিয়ে সম্প্রতি জার্মানিতে আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর অনেক নারী চিকিৎসক দুর্গত নারীদের সেবা দিতে এগিয়ে আসতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সরকার তাদের অনুমতি দেয়নি।’
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, ডিডব্লিউ