
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলাম জেলার কাসিবুগ্গা এলাকার ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে পদদলিত হয়ে অন্তত ১০ জন ভক্ত নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। শনিবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন কাসিবুগ্গা উপবিভাগীয় পুলিশ কর্মকর্তা (ডিএসপি) লক্ষ্মণ রাও।
পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম পবিত্র দিন একাদশী উপলক্ষে ওই মন্দিরে হাজার হাজার ভক্ত জড়ো হয়েছিলেন। সকাল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মন্দির চত্বরে ভিড় বেড়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পদদলনের ঘটনা ঘটে। এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘অনেক ভক্ত একসঙ্গে সামনের দিকে ধেয়ে পড়লে কয়েকজন মাটিতে পড়ে যায় এবং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা যায়।’
আহতদের দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে, কারণ ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজন অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একাদশী উপলক্ষে কাসিবুগ্গার ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে বিপুল সংখ্যক ভক্তের উপস্থিতিতে পদদলনের ঘটনা ঘটে। এতে অনেকেই আহত হয়েছেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের হাসপাতালে পাঠিয়েছে।’
ঘটনার খবর পেয়ে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী কে. আচান্নাইডু মন্দিরে যান এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। অতিরিক্ত পুলিশও ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী এন. চন্দ্রবাবু নাইডু এক্স (পূর্বে টুইটার)–এ শোকবার্তায় বলেন, ‘কাসিবুগ্গার ভেঙ্কটেশ্বর মন্দিরে পদদলনের ঘটনায় প্রাণহানির খবর অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। আহতদের দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি।’
অবৈধভাবে আয়োজন, সরকারি অনুমোদন নেয়নি কর্তৃপক্ষ
স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, যেখানে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে সেই মন্দিরটি ব্যক্তিমালিকানাধীন এবং রাজ্য এনডাওমেন্টস বিভাগে নিবন্ধিত নয়। একাদশী উপলক্ষে আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানের জন্য কর্তৃপক্ষ কোনো সরকারি অনুমোদন নেয়নি, এমনকি রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়নি।
ঘটনার সময় মন্দিরসংলগ্ন এলাকাটির কিছু অংশ এখনও নির্মাণাধীন ছিল। একই প্রবেশ ও প্রস্থান পথ ব্যবহারের কারণে ভিড় আরও বেড়ে যায় এবং বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
প্রতিটি নিহত পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২ লাখ রুপি এবং আহতদের ৫০ হাজার রুপি করে অনুদান দেওয়া হবে।
মোদি এক্সে পোস্ট করে বলেন, ‘অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামের ভেঙ্কটেশ্বর স্বামী মন্দিরে পদদলনের ঘটনায় প্রাণহানিতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’
এদিকে, অন্ধ্রপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই.এস. জগন মোহন রেড্ডি এ ঘটনাকে ‘দুঃখজনক ও হৃদয়বিদারক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই দুর্ঘটনায় ১০ জন ভক্তের প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সরকার যেন দ্রুত নিহতদের পরিবারকে সহায়তা করে এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।’
তিনি আরও বলেন, এর আগেও রাজ্যের মন্দিরগুলোতে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে—তিরুপতিতে বৈকুণ্ঠ একাদশীতে ৬ জন এবং সিমহাচলম মন্দিরে ৭ জন ভক্ত প্রাণ হারিয়েছিলেন। ‘বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও সরকার যথাযথ সতর্কতা নেয়নি, যা নিছক অবহেলা এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতা।’
জগন রেড্ডির ভাষায়, ‘নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি প্রশাসনের অদক্ষতার প্রতিফলন। ভবিষ্যতে যেন এমন দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য সরকারকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এর আগে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেও তিরুপতিতে বৈকুণ্ঠ একাদশী উপলক্ষে পদদলনের ঘটনায় ৬ জন ভক্ত নিহত হন। ওই সময় টোকেন সংগ্রহের লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষমাণ ভক্তরা হঠাৎ গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে সামনের দিকে ধেয়ে পড়েন, ফলে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ে এবং ভিড়ের চাপে প্রাণহানি ঘটে।
কর্তৃপক্ষের মতে, পর্যাপ্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় ওই দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়—যা এবারের কাসিবুগ্গা দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তির মতোই মনে করা হচ্ছে।