
মিরপুর ইনডোরের উডেন ফ্লোরে কাবা আন্তর্জাতিক ভলিবল ফাইনাল, আফগানিস্তান-তুর্কমেনিস্তান নামবে। তারা গা গরম করছিল। ভলিবল কোর্টের পেছনে চেয়ারে বসে ছিলেন বাংলাদেশ ভলিবল দলের অধিনায়ক হরষিত বিশ্বাস। মনের কষ্টটা চেহারায় পরিষ্কার ফুটে উঠছিল। কিছুক্ষণ আগে ব্রোঞ্জ পদকের লড়াইয়ে বাংলাদেশ সরাসরি ৩-০ সেটে হেরেছে শ্রীলঙ্কার কাছে। তখনো মেনে নিতে পারছিলেন না হরষিত।
লক্ষ্য ছিল ফাইনাল খেলবেন। আর টুর্নামেন্ট শেষে প্রাপ্তি হচ্ছে চতুর্থ স্থান। একেবারে বিধ্বস্ত হয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ভলিবল দল। জাপানি কোচ এনে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ১ মাস প্রশিক্ষণ দিলেন জাপানি কোচ। তার আগে দুই মাস প্রশিক্ষণ দিলেন দেশি কোচ। ফলাফল শূন্য। ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নেই।
অথচ ফাইনাল খেলার কথা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়ে ছিলেন কোচ এবং অধিনায়ক। তাদের যুক্তি ছিল টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার আগেভাগে ঢাকায় আসা দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেটাই দুজনকে স্বপ্ন দেখিয়েছিল, ফাইনালে খেলবেন।
বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। টুর্নামেন্টে নেমে সেই আফগানিস্তানের কাছে ৩-১ সেটে হেরে ফাইনালের স্বপ্ন ধূলিস্যাৎ হয় হরিষতের বাংলাদেশের। আফগানদের বিপক্ষে হারের
আগে তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ। তুর্কমিনিস্তান ৩-২ সেটে আফগানিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়।
কেন পারল না বাংলাদেশ? ‘টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালোই করেছিলাম, ধরে রাখতে পারিনি। দুটি ম্যাচ হেরে পিছিয়ে গেছি। তার কারণ আমরা অনেক দিন আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলিনি। ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলা হয়নি। ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা কম। প্রায় দুই বছর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়নি। আফগানিস্তান, তুর্কমিনিস্তান বছর ৬-৭টি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলে। তাদের এনার্জি লেভেল দেখেন।’
২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ, ২০১৮ সালে ফাইনাল খেলেছিল, অধিনায়ক বলেন, ‘কেন পারিনি আমি বলতে পারছি না। ১ জন খারাপ খেলতে পারে। আমরা ৬ জনই খারাপ খেলেছি। আমাদের এনার্জি লেভেলও ভালো ছিল না। প্রতিদিন ম্যাচ খেলতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে এটা হয় না।’
২০২২ সালে আবার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ, এবার ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ রেজাল্ট করেছে বাংলাদেশ। তিতাস আহমেদ, সুজন, পারভেজ মোশারফ, আল আমিন, নাইম হোসেন, শাফিন, রেদেওয়ানুর রহমান, তানভীর হোসেন তন্ময়, রাতুল আহমেদ, রাকেশ, সিফাতরা কাবা আন্তর্জাতিক ভলিবলে খেলতে নেমে দেখলেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে লড়াই করার মতো তারা আদৌ প্রস্তুত কি না।
জাপানি কোচ রায়ান মাসাজেদি বললেন, তার খেলোয়াড়দের ফিটনেস ভালো ছিল না, টেকনিক ভালো ছিল না। ‘আমরা টুর্নামেন্টের শুরুটা ভালো করেছিলাম। কিন্তু শারীরিকভাবে খেলোয়াড়রা দুর্বল ছিল।’ খেলোয়াড়দের দুর্বলতা আগেই কোচের চোখে পড়ার কথা। টেকনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠানোর দায়িত্ব কোচের কি না?
রায়ান বলেন, ‘আমি করেছি। কিন্তু যথেষ্ট সময় ছিল না।’ খেলোয়াড়দের উদ্দেশে কোচ বললেন, ‘তারা নিজেদের ফিটনেস উন্নতি করতে কাজ করেনি। এখানে ‘এ’ টিম, ‘বি’ টিম থাকতে হয়। তখন ভালোমন্দ বাছাই করা যায়, এটা আমার আইডিয়া। ১ মাস খুব একটা বড় সময় না। তার পরও আমি বলব ভালো হয়েছে। এখান থেকে রাতুল-নাইমের মতো ভালো খেলোয়াড় পেয়েছি আমরা। রাতুলকে জাপানের খেলোয়াড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন কোচ।
জাপানি কোচ বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উন্নতির জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তাগিদ দিলেন। ভলিবল কোচ রায়ান বলেন, ‘সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। খেলোয়াড়দের ফিটনেস বাড়াতে হবে, জিম সুবিধা দিতে হবে, বেশি বেশি ম্যাচ খেলানো এবং উন্নতমানের খাবার দিতে হবে। আমার বিশ্বাস ভালো করবে।’ কোচ বলেন, ‘যখন আপনার ফিটনেস থাকবে তখন আপনার আত্মবিশ্বাস থাকবে। যখন টেকনিক ভালো জানবেন তখন আপনি মানসিকভাবেও শক্তিশালী থাকবেন। এই দুটি জিনিস ছিল না।’
ফাইনালে বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক, ভলিবল ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক হাসান, সাধারণ সম্পাদক বিমল ঘোষ ভুলু, সহ সভাপতি এম এ লতিফ শাহরিয়ার জাহেদি প্রমুখ।