
যুক্তরাষ্ট্রের নোয়াহ লাইলসকে হারিয়ে যেন ভুলই করে ফেলেছেন জ্যামাইকার অবলিক সেভিল। টোকিওতে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস অঙ্গনে কদিন আগেও অবলিক সেবিল যাদের দিকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতেন তারা কেউ এখন সামনে আসেন না। দেখলে চোখ এড়িয়ে চলে যান। হোটেল লবিতে ড্রপ এরিয়াতে নেমে সেভিলকে দেখে দ্রুত পায়ে লিফটের দিকে চলে যান। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অ্যাথলেটকে এমনই দেখা গেছে।
অন্য একটি দেশের অ্যাথলেট যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাথলেটের দিকে হাত বাড়াতে গেলে তিনি হাত মেলাননি। এসব নিয়ে ভাবেন না সেভিল। টোকিওর সিনাগাওয়ায় প্রিন্স হোটেলে লিফটের কাছে আসতেই পরিচয় দিয়ে কথা বলতে গেলে প্রতি উত্তরে হায়-হ্যালো করেছেন, কথা বলতে চাননি। পরে অন্যের অনুরোধে কথা বললেন, ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের দ্রুততম মানব অবলিক সেভিল। আনুষ্ঠানিকভাবেই দুই মিনিটের একটি সাক্ষাৎকার দিলেন ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে ইতিহাস সৃষ্টি করা সেভিল।
প্যারিস অলিম্পিক গেমেস ১০০ মিটার স্প্রিন্টে লাইলসের সঙ্গে লড়াই করে আট জনের মধ্যে অষ্টম হওয়া ছেলেটি কীভাবে এক বছরের মধ্যে লাইলসকে হারিয়ে বিশ্বসেরা হয়ে গেল। বিশ্বসেরা ম্যাজিশিয়ান হয়ে গেলেন কি না। ‘এটা কোনো ম্যাজিক না। খেলা এমন একটি জিনিস আপনি ম্যাজিশয়ান হতে পারবেন না। ম্যাজিক দেখাতে হলে পরিশ্রম করতে হবে। গত একটা বছর আমি ট্র্যাকে কাটিয়েছি। আর নিজের উন্নতি নিয়ে ভেবেছি। নিজেকে কীভাবে উসাইন বোল্টের পর আর কে আছেন, যিনি এত ভালো করতে পেরেছে। নতুন একটা প্রজন্ম তৈরি হয়ে আসছে আগামী দিনের অ্যাথলেটিকসে। বোল্টের দেখানো পথে হাঁটছেন সবাই।’
মোটিভেট করতে হয় সেটি করেছি। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার ট্র্যাকে যা সবাই দেখেছেন সেটা শুধু নিজেকে মোটিভেশন করার কারণেই হয়েছে। অন্যকিছু নয়, বললেন সেভিল। দ্বিতীয় প্রশ্ন করার আগেই অবলিক সেভিল বললেন, ‘আমার অ্যাথলেটিকস ক্যারিয়ারের প্রতিটা সময় আমি নিজেকে সেরা স্থানে দেখার জন্য ভেবেছি। অনুশীলন করেছি আর একটা করে লড়াইয়ে দেখেছি আমি কোথায় পৌঁছলাম। প্রতিটা বছর আমাকে একটু একটু করে এগিয়ে যেতে হয়েছে। এখানেই শেষ নয়। আরও ভালো কিছু করার অপেক্ষা করছি আমি।’
প্যারিস অলিম্পিকে টাইমিং ছিল ৯.৯১ সেকেন্ড। টোকিও ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে টাইমিং হয়েছে ৯.৭৭। লাইলসকে (৯.৮৯ সেকেন্ড সময়) হারানোটাই কি টার্গেট ছিল কি না? ‘আমি কারো নাম বলতে চাই না। আমি শুধু আমাকে নিয়েই ভেবেছি। কীভাবে আমি এগিয়ে যাবো সেটা নিয়ে ভেবেছি। আমার পেছনের রেকর্ডগুলো যদি দেখেন সেটাই আপনাকে সব বলে দেবে। বিদ্যুৎ চমক দেওয়ার আগে একটা আভাস থাকে। বিনা কারণে আকাশে বিদ্যুৎ চমকে উঠে না। আমার দেশে অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ফার্স্ট হয়েছিলাম, টাইমিং উন্নতি করেছিলোম।’
অবলিস সেভিলের প্রিয় খেলোয়াড় উসাইন বোল্ট। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে যাওয়ার আগে বোল্টের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল? সেভিলের সরাসরি উত্তর, ‘না না কথা হয়নি। হ্যাঁ আমার আইকন তিনি। তবে খেলার আগে কিংবা পরে কথা হয়নি।’ লাইলসরা যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় গড়ে উঠেছেন। সেবিল গড়ে উঠছেন তার দেশ জ্যামাইকাতে। ক্লাব কোচিংয়ে। অন্য একটি সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের জবাবে সেভিল একটা চমৎকার কথা বলেছিলেন। সেটি নিয়ে পুনরায় প্রশ্ন করা হলে সেভিল বলেন, ‘আপনি যখন স্প্রিন্ট শুরু করবেন, তখন শুরুতে গতিময় থাকবেন, ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ না হওয়া পর্যন্ত তেমনই থাকবেন। সেটাই আমার ভাবনা।’
বোল্ট-ই অবলিক সেভিলের নায়ক। যাকে দেখে তিনিও এত পথ এসেছেন। সেভিল বললেন, ‘উসাইন বোল্টের পর আর কে আছেন, যিনি এত ভালো করতে পেরেছে। নতুন একটা প্রজন্ম তৈরি হয়ে আসছে আগামী দিনের অ্যাথলেটিকসে। বোল্টের দেখানো পথে হাঁটছে সবাই।’ ২৪ বছর বয়সী সেভিল ১০০ মিটার ছাড়াও তিনি ৪ গুনতিক ৪০০ মিটার রিলেতে খেলবেন।