
রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগে ক্রিকেটার তোফায়েল আহমেদ রায়হানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গুলশান থানার উপপরিদর্শক মো. সামিউল ইসলাম এ তথ্য জানান।
পেস বোলিং অলরাউন্ডার তোফায়েল বাংলাদেশ ‘এ’ দলের খেলোয়াড়।
পুলিশ কর্মকর্তা সামিউল বলেন, ধর্ষণের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ক্রিকেটার তোফায়েল আহমেদ রায়হানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। সাক্ষীরা আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার সত্যতা প্রমাণ করবেন।
প্রসিকিউশন বিভাগের এসআই তাহমিনা আক্তার জানান, আগামী ৩০ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী দিন ঠিক করা আছে। ওইদিন অভিযোগপত্রটি আদালতে উপস্থাপন করা হবে।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, বিয়ের ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে ওই তরুণীকে একাধিকবার ‘ধর্ষণ’ করেছেন আসামি।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আসামি তোফায়েলের সঙ্গে ভুক্তভোগী তরুণীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর থেকে তারা ফেসবুক মেসেঞ্জারে নিজেরা কথা বলতেন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হলে আসামি তোফায়েল ওই তরুণীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তবে তরুণী রাজি না হলেও তাকে বিয়ের প্রলোভনে দেখিয়ে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি করেন। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তাকে স্ত্রী পরিচয়ে গুলশানের একটি হোটেলে নিয়ে আসামি তোফায়েল তাকে ধর্ষণ করেন। তখন তাকে অল্প কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে করবেন বলে তরুণীকে আশ্বস্ত করেন তিনি। পরবর্তী সময় বিভিন্ন সময়ে তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করেন। ওই তরুণী তাকে বিয়ের কথা বললে তোফায়েল বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান।
এ ঘটনায় গত ১ আগস্ট ওই তরুণী বাদী হয়ে গুলশান থানায় ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার পর গত ২৪ সেপ্টেম্বর আসামি তোফায়েলকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাকে এই জামিন শেষ হওয়ার আগেই ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে আগাম জামিনের মেয়াদ শেষ হলেও তিনি ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করেননি।
অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ঘটনাটি মামলার ছয় মাস আগে হয়েছে বিধায় কোনো আলামত জব্দ করা সম্ভব হয়নি। মামলার বাদী নিজেও কোনো আলামত উপস্থাপন করতে পারেননি। হোটেলে রক্ষিত রেজিস্ট্রার বুকের গেস্ট বুকিং সংক্রান্ত রেজিস্ট্রেশন স্লিপ, তরুণী ও আসামির পাসপোর্ট কপি জব্দ করা হয়। ডিএনএ রিপোর্টে আসে, পরীক্ষায় ভ্যাজাইনাল সোয়াবে বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। সার্বিক তদন্তে প্রথম দিনের ঘটনা, হোটেল বুকিং কপি, ধর্ষণের মেডিক্যাল রিপোর্টসহ অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনায় আসামি তোফায়েলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত হয়।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী তরুণী বলেন, ‘বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে স্থাপন করে। বিষয়টি সমাধানে তার পরিবারের কাছে গিয়েও ফল পায়নি। ঘটনার এক পর্যায় বিসিবি প্রেসিডেন্টকে লিখিত অভিযোগ দিই। তিনি আশ্বাস দিয়েও কথা রাখেননি। এইভাবে প্রতিনিয়ত পদে পদে অনেকভাবে সম্মানহানি হেয় প্রতিপন্ন ও হেনস্তার শিকার হচ্ছি। আমি আদালতে ন্যায় বিচার চাই।’