Dark Mode Light Mode

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Follow Us
Follow Us
English English

বিধ্বস্ত ব্যাংকিং খাত টেনে তোলার চেষ্টা, স্থবির বিনিয়োগ

বিধ্বস্ত ব্যাংকিং খাত টেনে তোলার চেষ্টা, স্থবির বিনিয়োগ বিধ্বস্ত ব্যাংকিং খাত টেনে তোলার চেষ্টা, স্থবির বিনিয়োগ
বিধ্বস্ত ব্যাংকিং খাত টেনে তোলার চেষ্টা, স্থবির বিনিয়োগ


বিগত এক বছর বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য ছিল চাপ, সংস্কার ও পুনর্গঠনের সময়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সব মিলিয়ে অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারকে নিতে হয়েছে একাধিক কঠিন সিদ্ধান্ত। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, এই এক বছরে অর্থনীতি একদিকে সংকট মোকাবিলা করেছে, অন্যদিকে কাঠামোগত সংস্কারের পথে এগোনোর চেষ্টা করেছে। অবশ্য সাধারণ মানুষের জীবন খুব একটা স্বস্তিদায়ক হয়নি। মূল্যস্ফীতি এখনো ৮ শতাংশের বেশি। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি এখন বাংলাদেশেই।

দেশের অর্থনীতিতে জ্বালানিসংকট, উচ্চ সুদহার, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া এসব সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আরো বেরিয়ে এসেছে ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, প্রশাসনে অস্থিরতা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করেছে রাজস্ব আদায়ে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে সামষ্টিক অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা।

Advertisement

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রায়শই বলেছেন, খাদের কিনার থেকে অর্থনীতিকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিছু সাফল্যও মিলেছে। প্রবাসী আয় বেড়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতন ঠেকানো গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই ডলারের দর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় এক জায়গায় স্থির হয়ে ছিল। এরপর আরো কিছুটা বেড়ে সেই উচ্চ দরেই ডলার এখন স্থিতিশীল আছে। এই সুযোগে বিনিময় হারকে প্রায় বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগও কিছু বেড়েছে। ফলে বলা যায়, আগের সরকারের সময়ের তুলনায় সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবশ্যই উন্নতি হয়েছে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় যুক্ত হওয়া বড় দুটি উপাদান হচ্ছে অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা। ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এর প্রতিফলন মিলেছে বিনিয়োগ চিত্রে। বিনিয়োগ স্থবিরতা আগে থেকেই রয়েছে, বিগত এক বছর এই স্থবিরতা আরো বেড়েছে বলা যায়। অবশ্য ২০২৪ সালের তুলনায় ২০২৫ সালে শিল্প-কারখানায় অস্থিরতা কমেছে।

সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে মূল্যস্ফীতি: বছরের শুরুতে উত্তাপ, মাঝে খানিকটা স্বস্তি-শেষদিকে আবারও ঊর্ধ্বমুখী। দাম-দরের এমন উত্থান-পতনে বছর পার করছে চাল-তেল-পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের বাজার। উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিগত তিন বছর ধরেই দেশের অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ায় দেশের মানুষের প্রকৃত আয় ক্রমেই কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জিনিসপত্রের উর্ধ্বগতির কারণে বাড়তি আয়ের সুফল মিলছে না, বরং খরচের চাপ বাড়ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে, মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি কম হারে বাড়ায় মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ধারাবাহিকভাবে দুর্বল হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) অনুযায়ী, সর্বশেষ নভেম্বরে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশে, যা অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। এক বছর ধরে কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণের পরও মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতি নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। অন্যদিকে, একই সময়ে মজুরি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ০৪ শতাংশে, যা মূল্যস্ফীতির চেয়ে কম। ফলে পরিবারগুলোর প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য ২০২৪ সালের শেষ দিকে দুই অঙ্কের মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে নেমেছে, এটাই স্বস্তি।

ব্যাংকিং খাত: বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে টেনে তোলার লড়াই: বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাংকিং খাতের অব্যবস্থাপনা, অর্থ পাচারের মতো বিভিন্ন ঘটনা বেরিয়ে আসার পর বছর জুড়েই আলোচনায় রয়েছে এই খাতটি। দীর্ঘদিনের এই গভীর সংকট ২০২৫ সালে এসে চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত হয়। ফলে বছরটি সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বছর জুড়ে নানামুখী সংস্কার উদ্যোগ, কঠোর নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত এবং কিছু সাহসী পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ব্যাংকিং খাত এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল হয়ে ওঠেনি। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি উভয় ধরনের ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের চাপ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ব্যাংকগুলো যত টাকা ঋণ দিয়েছে, তার এক-তৃতীয়াংশের বেশি এখন খেলাপি। অবশ্য আগের সরকার খেলাপির তথ্য গোপন করেছিল, যেগুলো পরবর্তীতে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে বেরিয়ে আসে। ২০২৫ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচটি শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে। পাঁচ ব্যাংক হলো এক্সিম, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী ও ইউনিয়ন ব্যাংক। নতুন বছরের শুরুতে সম্মিলিত ইসলামী ব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে। এটি হচ্ছে দেশের সরকারি মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক। যার পরিশোধিত মূলধন নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ইতিমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা বাজেট থেকে দিয়েছে।

বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটেনি: দেশে বিনিয়োগ স্থবিরতা আগেও ছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সেটি আরো বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি বছরের ২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির টানা নিম্নমুখী প্রবণতাকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা সম্প্রসারণে অনাগ্রহী হওয়ায় মূলধনি যন্ত্রপাতির চাহিদাও কমে গেছে, যার প্রভাবে কমেছে ঋণ নেওয়া। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে নতুন বিনিয়োগে দুর্বলতা। নতুন বিনিয়োগ না করা হলে মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি করা কমে যায়। তখন ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমে যায়।

এনবিআরে আন্দোলন, ক্ষতিগ্রস্ত রাজস্ব আদায়: প্রশাসনের নানা স্তরে অস্থিরতার মাঝে নজিরবিহীনভাবে আন্দোলন করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বছরের মাঝামাঝি নতুন অর্থবছরের প্রাক্কালে এনবিআর বিলুপ্তির প্রতিবাদে দেড় মাসের আন্দোলনের প্রভাবে রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। এর ফলে আমদানি-রপ্তানি ও অন্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে রাজস্ব সংগ্রহে। আন্দোলনের শেষ দিকে সব ধরনের রাজস্ব আদায় কার্যক্রম দুই দিন বন্ধ রাখা হয়। ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি থেকে বাদ যায়নি চট্টগ্রাম বন্দরও। এই আন্দোলনের বড় প্রভাব পরেছে অর্থনীতিতে। ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এই দুটি বিভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়। এর পর থেকে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে সংস্কারে দাবিতে প্রায় দুই মাস আন্দোলন করেন। ২৮ ও ২৯ জুন সারা দেশে কাজ বন্ধ করে দেন তারা। এরপর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার করেন তারা। এরপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত করা হয়। এ ছাড়া এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক।

কম বরাদ্দের এডিপি বাস্তবায়নেও ধীরগতি: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি অনেক দিন ধরেই নিম্নমুখী। এডিপি বরাদ্দ আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশ খানিকটা কমানোর পরও বাস্তবায়নে গতি ফেরেনি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়ন সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিল, বাস্তবায়ন হয় ৬৮ শতাংশেরও কম। এরপর চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের এডিপির আকার ছোট করে ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরে থেকে ৩৯ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা কম। এরপরেও বাস্তবায়নে গতি কমে গেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে (জুলাই থেকে নভেম্বর) বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৪৪ কোটি টাকা। বাস্তবায়নের হার বরাদ্দের মাত্র ১১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এ বাস্তবায়ন হার ছিল ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। ঐ অর্থবছরে বরাদ্দও বেশি ছিল। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এডিপি বরাদ্দ বা বাস্তবায়নযোগ্য করতে নানা উদ্যোগ নেয়। অর্থ ছাড়সহ অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সব ধরনের জটিলতা এড়ানো হয়েছে। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত নতুন আইন ও বিধিমালা হয়েছে। এতে শতভাগ ক্রয় অনলাইনভিত্তিক করা হয়েছে। এসব উদ্যোগের সুফল হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়বে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবায়নে গতি ফেরেনি।

স্বস্তি রিজার্ভ আর রেমিট্যন্সে: ২০২৫ সালের শুরুতে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে যে ভারসাম্যহীনতা ছিল, তা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের গ্রস বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা ২০২৪ সালের আগস্টে ছিল প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। বিনিময় হার স্থিতিশীল হওয়া, প্রবাস আয় বৃদ্ধি রিজার্ভ আরো বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৫ লাখ কর্মীর বৈদেশিক নিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার। একই সময়ে প্রবাস আয় এসেছে ১৩ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ ভালো হওয়ায় রিজার্ভে কিছুটা স্বস্তি মিলেছে।





Source link

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post
নতুন বছরের শুরুতে কমছে স্বর্ণের দাম

নতুন বছরের শুরুতে কমছে স্বর্ণের দাম

Next Post
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৭ কমিশনারকে একযোগে বদলি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৭ কমিশনারকে একযোগে বদলি

Advertisement