Dark Mode Light Mode

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Follow Us
Follow Us
English English

বিধ্বস্ত গাজায় একজন মায়ের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম

বিধ্বস্ত গাজায় একজন মায়ের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম বিধ্বস্ত গাজায় একজন মায়ের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম
বিধ্বস্ত গাজায় একজন মায়ের বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিনের সংগ্রাম


গাজা আজ একটি কবরস্থান। এক অস্থির দৃশ্য – যেখানে হাজার হাজার মানুষের লাখ লাখ স্বপ্ন একসময়ের প্রাণবন্ত শহরের নিচে চাপা পড়ে আছে। ইসরায়েলের গণহত্যার যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গেছে। দুই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ৬৭ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

তুর্কিভিত্তিক টিআরটি ওয়ার্ল্ড গাজা যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (৬ অক্টোবর) চার পর্বের সিরিজের প্রথম পর্বে চার সন্তানের জননী এক ফিলিস্তিনি নারীর গণহত্যার মধ্য দিয়ে জীবনযাত্রার চিত্র তুলে ধরেছে। এটি কেবল জীবনযাত্রার চিত্রই নয় – একটি সংগ্রাম ও বেঁচে থাকার গল্প। মৃত্যু ও ধ্বংস এবং সর্বোপরি স্থিতিস্থাপক প্রতিরোধের গল্প।

Advertisement

গল্পটি গাদির আল হাব্বাশের, বয়স ৩৭ বছর। একজন স্বামীহারা এবং চার সন্তানের মা। এটি গাজার আরও হাজার হাজার মায়ের গল্পও হতে পারে – যারা বুলেট এবং বোমার মধ্য দিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।

গাদির নিজেকে ‘একজন শহীদের স্ত্রী’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। তার স্বামী পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। রায়েদ আল হাব্বাশ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে একজন ইসরায়েলি স্নাইপারের হাতে নিহত হন। এর ফলে পরিবারের খরচ এখন তাকে একাই বহন করতে হয়।

খান ইউনিসে আগেই একটি বিমান হামলায় তাদের বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। যার ফলে তারা কিছুটা নিরাপত্তা এবং আশ্রয়ের সন্ধানে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যেতে বাধ্য হন।

খান ইউনিসের তাঁবুতে বসে তিনি স্বামীকে হারানর বর্ণনা দেন, ‘একদিন, সে আমাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িতে ফিরে গিয়েছিল, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে কিছু কাপড় এবং খাবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে…। তাঁবুতে ফেরার পথে সে এক ব্যাগ ময়দা এবং কিছু কাপড় বহন করছিল। কিন্তু… (একজন ইসরায়েলি) স্নাইপার তার মাথায় গুলি করে।’

‘আমাদের একসময় যে বাড়ি ছিল, তার দরজায়ই সে মারা গেল।’

তারপর থেকে জীবন এক অবিরাম সংগ্রামে পরিণত হয়েছে – চার সন্তানের জন্য খাবার খুঁজে বের করার চেষ্টা। ছোটটির বয়স মাত্র চার।

ইসরায়েল যখন সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে দেয় এবং গাজায় পূর্ণাঙ্গ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়, তখন খাবারের পরিমাণ কমে রুটি এবং ডালের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। ফলমূল এবং শাকসবজি বিলাসিতা হয়ে ওঠে। বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং স্যানিটেশন সুবিধা সীমিত হয়ে যায়।

কোন নির্দিষ্ট আয়ের উৎস না থাকায় পরিবারটি ছোট আর্থিক অনুদানের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে, যা মোট ৩০০ মার্কিন ডলারের বেশি নয়।

সকালবেলা : বেঁচে থাকা শুরু হয় ভোরে

প্রতিদিন সকালে গাদির তার অবশিষ্ট দুটি আবায়ার (বোরকাজাতীয় পোশাক) মধ্যে একটি পরেন – মাথায় তারার প্যাটার্নের স্কার্ফ। অন্যদের সঙ্গে শেয়ার করে নেওয়া তাঁবুর ধুলো ঝাড়ু দেন।


ছবির আর্টিস্ট: মুসাব আবদুল্লাহ গুঙ্গর

আশ্রয়স্থলটি জনাকীর্ণ, দিনের বেলায় তাপ আটকে রাখার জন্য টার্প ব্যবহার করা হয় এবং রাতে খুব কম আরামই পাওয়া যায়। বিছানা এবং আসন উভয়ের জন্যই পাতলা আবরণ ব্যবহার করা হয়।

তিনি বলছিলেন, ‘কোনো গোপনীয়তা নেই। আমরা আমাদের শরীর, আমাদের মর্যাদা, কিছুই রক্ষা করতে পারি না। এই তাঁবুটি জীবনের জন্য উপযুক্ত নয়। শীতকাল এলে বৃষ্টিতে ভেসে যাবে এবং ঠান্ডায় আমারা জমে যাব।’

তিনি তার মেয়ের চুল আঁচড়াচ্ছেন এবং তারপর তাঁবুর ঠিক পেছনে সীমিত জিনিসপত্র ও চড়া দামের একটি অস্থায়ী বাজারে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আজই বাচ্চাদের জন্য কিছু জিনিস কিনতে গিয়েছিলাম। যেগুলোর দাম আগে ১০ বা ১৫ শেকেল ছিল, এখন এগুলোর দাম ৫০। আমি জানি না আমরা কীভাবে ৫০ শেকেল পাব। টাকা নেই।’ (১ মার্কিন ডলার মোটামুটি ৩.৩০ শেকেলের সমান)

গ্রীষ্মের শ্বাসরুদ্ধকর তাপ – রাতগুলোও কোন স্বস্তি দিচ্ছে না। গাদির বলেন, ‘দিনের তাপে আমরা মারা যাচ্ছি। রাতেও আমরা ঘুমাতে পারি না। ঘেউ ঘেউ করা কুকুর, মাছি, শ্বাসরোধকারী তাপ।’

দুপুরবেলা : তাপ, ক্ষুধা ও বিধ্বস্ত জীবন

দুপুর নাগাদ ক্যাম্পটি প্রচণ্ড গরমে ভরে ওঠে। ছেঁড়া তাঁবুর ভেতরে গাদির তার পরিবারের জন্য সেদিনের একমাত্র খাবার তৈরি করছিলেন। কাঠের টুকরো এবং যা কিছু তিনি পান, তা দিয়েই আগুনে ফুটন্ত এক হাঁড়ি মসুর ডাল বসালেন।


ছবির আর্টিস্ট: মুসাব আবদুল্লাহ গুঙ্গর

তাদের দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার আসে কাছের একটি কমিউনিটি রান্নাঘর থেকে। কিন্তু ইসরায়েল সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে, অনেক দিনই এমন আসে, যেদিন কমিউনিটি রান্নাঘর কাজ করতে পারে না। তখন রান্না করার মতো কিছুই থাকে না।

আজ সেই দিনগুলোর মধ্যে একটি। গাদির যখন ধীরে ধীরে ডাল নাড়ছেন, তখন তিনি নিজেকে এবং বাচ্চাদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ‘এটাই দিনের একমাত্র খাবার।’ কিন্তু খাওয়ার সময় এখনো কয়েক ঘণ্টা বাকি…।

বাচ্চারা ভাগ্যবান যে সারাদিন এক প্যাকেট বিস্কুট বা এক টুকরো রুটি খুঁজে পায়। তিনি বলছিলেন, ‘নাস্তা নেই, দুপুরের খাবার নেই। শুধু এইটা (সন্ধ্যায়)…হয়তো রাতে ঘুমানোর আগে এক টুকরো রুটি।’

পরিবারটি আলু, মাংস এবং চিনিযুক্ত চা খেতে চায়। কিন্তু এগুলো নাগালের বাইরে। তিনি বলেন, ‘এক কেজি মাংসের দাম ৭০ শেকেল। এমনকি আলুর দামও অনেক বেশি।’

তার ছোট মেয়ে, মাত্র চার বছর বয়সী সুয়াদ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। পাতলা বিছানায় কুঁকড়ে যাওয়া মেয়েটির দিকে ইশারা করে গাদির বলেন, ‘আমি তার জন্য ওষুধও কিনতে পারব না।’

তিনি বলেন, ‘যদি তাদের বাবা বেঁচে থাকতেন, তাহলে তিনি তাদের যত্ন নিতেন। কিন্তু এখন… আমি জানি না কী করব।’

দুই দিন আগে তাঁবুর কাছে গোলাগুলি হয়েছে। একটি টুকরো ছিঁড়ে বাচ্চারা যেখানে ঘুমাচ্ছে, তার ঠিক উপরে পড়েছিল। তিনি বলেন, ‘একমাত্র আল্লাহই তাদের রক্ষা করেছেন।’

১৪ বছর বয়সী বড় ছেলে বয়সের তুলনায় অনেক বেশি বোঝা বহন করছে। গাদির বলছিলেন, ‘সে প্রায়ই প্রার্থনা করে, ‘হে আল্লাহ, আমাকে আমার বাবার কাছে নিয়ে যাও, আমাকে শান্তি দাও। একটি শিশুর স্বপ্ন এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত – কিন্তু সে কেবল এই জীবন থেকে পালাতে চায়।’

শীতকাল আসছে। সামনে কী অপেক্ষা করছে, পরিবারটি তা নিয়ে চিন্তিত। তিনি বলেন, ‘আমরা আল্লাহর করুণার জন্য অপেক্ষা করছি… হয়তো কেউ আমাদের সাহায্য করবে, হয়তো কেউ এই শিশুদের যত্ন নেবে।’

সন্ধ্যাবেলা : এক খাবার, অনেক প্রার্থনা

শিবিরে সন্ধ্যা নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে, গাদির পাতলা মাদুরের মাঝখানে মসুর ডালের পাত্রটি রাখে। বাচ্চারা মাঝারি আকারের পাত্রটির চারপাশে নীরবে জড়ো হয় – তাদের মুখ ধুলো আর তাপে ছেয়ে গেছে। তার মেয়ে তার বাহুতে ফুসকুড়ি আঁচড়ে দেয় আর ফিসফিসিয়ে বলে, ‘মা, এটা জ্বলে যাচ্ছে।’


ছবির আর্টিস্ট: মুসাব আবদুল্লাহ গুঙ্গর

গাদির মেয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকান। বলেন, ‘আমরা ক্লিনিকে যাই এবং তারা আমাদের নিজেদেরই (ওষুধ) কিনতে বলে। কিন্তু কোথা থেকে? আমি টাকা কোথা থেকে পাব?’

কথা বলতে বলতে তিনি রুটি টুকরো টুকরো করে পাতলা ডালের মধ্যে ভিজিয়ে রাখেন। সন্তানদের আস্তে আস্তে বললেন, ‘খাও, আমার ভালোবাসাগুলো। আমাদের কাছে এটাই সব।’

খাবারের চামচগুলো পাত্রের তলা ঘষে ঘষে যা অবশিষ্ট আছে, তা উঠানোর চেষ্টা করে। কেউ কথা বলে না।

গাদির বিড়বিড় করে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমরা প্রতিদিন এটা (আলহামদুলিল্লাহ) বলতে থাকি। আমরা বলি আমরা ধৈর্যশীল। কিন্তু মাঝে মাঝে…।’ তিনি ইতস্তত বোধ করেন, তবে বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা বলি, হে আল্লাহ, আমাদের নিয়ে যাও। এই জীবনের চেয়ে এটাই ভালো হতো।’

এসব বলতে বলতে তিনি পাত্রটির দিকে তাকান… এখন প্রায় খালি। বলেন, ‘বাচ্চারা দাতব্য রান্নাঘর থেকে খাবার পেতে রোদে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে। আর যদি খাবার না থাকে, তারা ক্ষুধার্ত থাকবে…।’

বাচ্চাদের জন্য পানি জোগাড় করাও একটা যুদ্ধের মতো মনে হয়। তিনি বলেন, ‘আজ কি লাইনটা দেখেছো? মানুষ সবকিছুর জন্য লড়াই করে। রুটির জন্য, পানির জন্য, জ্বালানি কাঠের জন্য। পুরুষরা ধাক্কাধাক্কি করে, নারীরা ধাক্কাধাক্কি করে। একজন নারীর কি শুধু পানির জন্য ভিড়ের মধ্যে নিজেকে পিষে ফেলতে হবে? যুদ্ধ আমাদের এই অবস্থাই করেছে।’

তিনি হাঁড়ির ওপর দিয়ে রুটির শেষ টুকরোটা মুছে নেন। শান্তভাবে বলেন, ‘হে আল্লাহ, আমাদের মুক্তি দাও। আমরা যা পার করছি, তা পৃথিবীর কেউ অনুভব করে না। আমরা ক্লান্ত, সত্যিই ক্লান্ত।’

বাচ্চারা কথা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবার ফিসফিস করে বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ আরেকদিনের জন্য…।’

রাত : আগুনের ধারে চা

রাত নামার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাম্পটি অন্ধকারে ডুবে যায়। বিদ্যুৎ নেই। বাতি নেই। দিনের বেলায় সংগৃহীত ভাঙা কাঠের টুকরো দিয়ে তাঁবুর ধারে কেবল মৃদু আগুন জ্বলছে। বিছানার পাশে বসে একটি পাত্র নাড়াচাড়া করছে, আর বাচ্চারা ফুটন্ত পানিতে চা পাতা গুঁড়ো করছে।


ছবির আর্টিস্ট: মুসাব আবদুল্লাহ গুঙ্গর

গাদির আস্তে আস্তে বলেন, ‘কাঠের দাম অনেক বেশি। মানুষ যা ফেলে দেয়, যা আগুন জ্বালাতে পারে, আমরা তাই খুঁজি। যাতে বাচ্চারা ঘুমানোর আগে চা খেতে পারে।’

সাবধানে কাপগুলো পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় আগুনের আলো তাদের মুখের ওপর দিয়ে নাচছে – রাতের বাতাসে পাতলা বাষ্প উঠে আসছে।

তিনি বলেন, ‘এটা পুরনো দিনের মতো মনে হচ্ছে। তাঁবুর আগে, বোমা হামলার আগে… রাতে চা মানে ছিল শান্তি, পরিবার।’

গাদিরকে বাচ্চারা ধীরে ধীরে চুমুক দেয়। একজন তার কাছে ঝুঁকে পড়ে। সে বলেন, ‘মা, আগামীকাল দিনটা কি আরও ভালো হবে?’ গাদির আগুনের দিকে তাকিয়ে আছেন। ফিসফিস করে বলেন ‘হয়তো’।

দিন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাঠের টুকরোর আগুন ছাই হয়ে যায়। কাপ ও হাঁড়ি খালি হয়ে যায় এবং অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।

গাদির বলেন, ‘এখন এটাই আমাদের জীবন।’ ‘কেউ আমাদের দেখতে পায় না। কেউ আমাদের কথা শোনে না। কেবল আল্লাহ।’





Source link

Keep Up to Date with the Most Important News

By pressing the Subscribe button, you confirm that you have read and are agreeing to our Privacy Policy and Terms of Use
Add a comment Add a comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Previous Post
বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় চাকরি হারালেন ব্রাজিল কোচ

বিশ্বকাপ ব্যর্থতায় চাকরি হারালেন ব্রাজিল কোচ

Next Post
৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

৪ দিনের রিমান্ডে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি

Advertisement