
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কড়া অবস্থান নিয়ে আসছে ট্রাম্প প্রশাসন। কোভিড-১৯ মহামারির সময় অনলাইন ক্লাসে ভর্তি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের হুমকি, চীনা শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত নিরাপত্তা নজরদারি এবং নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগে হাজারো শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল—এসব পদক্ষেপে স্পষ্ট হয়েছে যে প্রশাসন বিদেশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিকে সম্ভাব্য ঝুঁকি হিসেবে দেখে। এবার সেই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের থাকার সময়সীমা সীমিত করার নতুন প্রস্তাব দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
বর্তমানে এফ (F) ভিসাধারী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার মেয়াদ চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পান, যা ‘duration of status’ নামে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরে এই নমনীয় নীতিই মার্কিন উচ্চশিক্ষার অন্যতম আকর্ষণ ছিল। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের ভিসার মেয়াদ তাঁদের একাডেমিক প্রোগ্রামের সময়সীমার ওপর নির্ভর করবে এবং সর্বোচ্চ চার বছর পর্যন্ত সীমিত থাকবে। পড়াশোনা শেষ হলে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৬০ দিন সময় পাবেন ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন, অন্য কোনো বৈধ ভিসায় রূপান্তর কিংবা যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের জন্য।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, পূর্ববর্তী প্রশাসনগুলো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ‘প্রায় অনির্দিষ্টকালের মতো’ যুক্তরাষ্ট্রে থাকার সুযোগ দিয়েছে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়েছে, করদাতাদের অর্থ ব্যয় বৃদ্ধি করেছে এবং মার্কিন নাগরিকদের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিয়েছে। তাঁর দাবি, নতুন নীতি স্পষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করবে, ফলে সরকারের পক্ষে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি সহজ হবে।
এই সময়ে শিক্ষার্থী ভিসার ওপর ব্যাপক ধরপাকড়ও চলছে। সম্প্রতি স্টেট ডিপার্টমেন্ট ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভিসা বাতিল করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় চার গুণ বেশি। কর্মকর্তাদের ভাষ্য, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও দেশে থেকে যাওয়া, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো বা চুরির মতো অপরাধ এবং কিছু ক্ষেত্রে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এসব ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া দূতাবাস ও কনস্যুলেটগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থী ভিসার আবেদনকারীদের কঠোরভাবে যাচাই করতে। বিশেষ করে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, সংস্কৃতি, সরকার, প্রতিষ্ঠান বা মৌলিক নীতির প্রতি কোনো ধরনের ‘শত্রুভাবাপন্ন মনোভাব’ পোষণ করেন কি না, তা কয়েক ধাপে পরীক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য এই পরিবর্তন নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের শিক্ষার্থীদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষার অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য। এর অন্যতম কারণ ছিল নমনীয় ভিসা নীতি এবং পড়াশোনা শেষে কাজের সুযোগ। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়ায় স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরা বিপাকে পড়বেন। আমেরিকায় থেকে চাকরি খোঁজা বা পিএইচডি প্রোগ্রাম শুরু করার মতো অন্তর্বর্তী সময় আর পাওয়া যাবে না। তাছাড়া দীর্ঘ একাডেমিক প্রোগ্রাম, বিশেষ করে পিএইচডি শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন জটিলতা তৈরি করতে পারে। ফলে নতুন আবেদনকারীরাও অনিশ্চয়তায় পড়বেন।
সর্বশেষ এই প্রস্তাব দেখাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন জাতীয় নিরাপত্তা ও মার্কিন স্বার্থ সুরক্ষার নামে শিক্ষা ও ভিসা নীতি পুনর্গঠন করছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের সামনে এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তির নয়, বরং সেখানে গিয়ে সম্পূর্ণ একাডেমিক যাত্রা শেষ করা আদৌ সম্ভব হবে কি না।
সূত্র: সিএনএন