
এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই তীব্র উত্তেজনা। কিন্তু এবারের আসরের গ্রুপ পর্বে ক্রিকেটীয় লড়াই ছাড়িয়ে গড়িয়েছে কূটনৈতিক টানাপোড়েনে। মূল আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট। গেল ১৪ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে থেকেই নাটকীয়তার সূত্রপাত।
ভারতের ক্রিকেটারদের পাকিস্তানিদের সঙ্গে করমর্দন না করার সিদ্ধান্ত বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। সরকারি অনুমোদনের ছায়ায় নেওয়া এই অবস্থানকে অনেকেই ভারতের রাজনৈতিক গোয়ার্তুমি হিসেবে দেখছেন। শেষ মুহূর্তে পাইক্রফট পাকিস্তানের অধিনায়ককে এ তথ্য জানিয়ে দেন, যেন টসের সময় কোনো অস্বস্তিকর দৃশ্য তৈরি না হয়। তবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) মনে করে, একজন নিরপেক্ষ ম্যাচ রেফারির দায়িত্ব ছিল এমন নির্দেশনা প্রত্যাখ্যান করা, তা বাস্তবায়ন নয়।
পরের দিনই পিসিবি আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তোলে পাইক্রফটের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, তিনি ক্রিকেটীয় চেতনা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং ভারতকে অযৌক্তিকভাবে সুবিধা দিয়েছেন। এখান থেকেই বিরোধ তীব্র আকার নেয়। পাইক্রফটকে সরানোর দাবিতে পিসিবি আইসিসির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, এমনকি আরব আমিরাতের বিপক্ষে ম্যাচ বয়কটের হুমকিও দেয়।
কিন্তু আইসিসি শুরু থেকেই পাইক্রফটের পাশে দাঁড়ায়। তাদের ব্যাখ্যা-ম্যাচ রেফারি কেবল বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন, তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ছিলেন না। কোনো দেশের চাপে ম্যাচ কর্মকর্তাকে বদলানো হলে তা ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক নজির হয়ে দাঁড়াবে বলেও জানায় সংস্থাটি।
এই টানাপোড়েন থেকে নতুন বিতর্ক জন্ম নেয়। পিসিবি অভিযোগ করে, বৈঠকে তাদের মিডিয়া ম্যানেজারকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, পরে আবার গোপনে বৈঠকের ভিডিও ধারণ করা হয়, যা নিয়ম বিরুদ্ধ হলেও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হয়। সেখানে দাবি করা হয় পাইক্রফট ক্ষমা চেয়েছেন। আইসিসি অবশ্য পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, তিনি কেবল ভুল বোঝাবুঝির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, ক্ষমা নয়।
ঘটনাপ্রবাহ প্রমাণ করে, ভারতীয় ক্রিকেটারদের হাত না মেলানো সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে তৈরি সংকট আসলে বড় আকার পেয়েছে ম্যাচ রেফারিকে কেন্দ্র করে। একদিকে পিসিবির অনড় অবস্থান, অন্যদিকে আইসিসির অটল সমর্থন-ফলে পাইক্রফট হয়ে উঠেছেন বিতর্কের মূল চরিত্র। এবার সেখানে পিসিবির বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে চলমান লড়াইকে সতেজ করেছে আইসিসি। নিয়ম না মেনে পাইক্রফটের সঙ্গে আলোচনার ভিডিও করা ও তা ‘ভুলভাবে প্রচার’ করায় বেজায় চটেছে বৈশ্বিক সংস্থাটি। আগামীকাল সুপার ফোরে পাকিস্তান-ভারত মাঠে নামবে। সেই ম্যাচের আগে এই বিতর্ক কোনোভাবেই থামছে না, বরং নতুন গতি পেয়েছে।