
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। চলমান বন্যায় এখন পর্যন্ত ১৪ জন নিহত এবং অনেকে নিখোঁজ রয়েছেন। ইন্দোনেশিয়া এই বন্যাকে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হিসেবে অভিহিত করছে এবং এর ভয়াবহতা বিবেচনা করে রাজ্যটিতে এক সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত কয়েক দিনের টানা অতিবৃষ্টিতে নদীর পানি উপচে এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বন্যা ও ভারী বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে ভূমিধস হয়েছে এবং বহু বাড়িঘর, হাসপাতাল ও অফিস-আদালত প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছেন যে, কমপক্ষে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু এবং কয়েকটি প্রধান সড়কও বিধ্বস্ত হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে হাজার হাজার বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, বন্যার পানিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বালির দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় দুজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। শুধু বালির রাজধানী দেনপাসারেই আটজন নিহত এবং আরও দুজন নিখোঁজ রয়েছেন। এছাড়াও, গিয়ানইয়ার নামে একটি এলাকায় তিনজন এবং বাদুং কাউন্টিতে একজন মারা গেছেন।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বন্যার কারণে রাজধানীতে দুটি ভবন ভেঙে পড়েছে, যার ফলে প্রায় ৮৫ জন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বর্তমানে জেমব্রানা ডিস্ট্রিক্টে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট প্রাবো সুবিয়ান্তো নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। ক্যাবিনেট সচিব জানিয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট দ্রুত পদক্ষেপ নিতে এবং লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আন্তারাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বালির অনুসন্ধান ও উদ্ধার সংস্থার প্রধান নিয়োমান সিদাকার্যা বলেছেন যে, উদ্ধারকর্মীরা প্লাবিত এলাকায় প্রবেশে বড় ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘সব জায়গাই পানিতে ডুবে গেছে, এমনকি ট্রাকও কষ্টে চলাচল করছে।’ শুধু বালিই নয়, পাশের তেংগারা প্রদেশও প্লাবিত হয়েছে এবং সেখানেও কমপক্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে।
জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলোও এই বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হোটেল কর্মকর্তারা বলছেন যে, বন্যার কারণে তাদের মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নর্দমার মুখে ময়লা-আবর্জনা জমে পানি নিষ্কাশন প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বালির আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যদিও আজ বৃহস্পতিবার বৃষ্টিপাত কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবুও বালি এখনো তীব্র আবহাওয়া সতর্কতার মধ্যে রয়েছে।