
ডিজিটাল বিশ্বে্র বর্তমানে অন্যতম একটি অংশ হলো কনটেন্ট ক্রিয়েটর। বিনোদনমূলক কনটেন্ট তৈরি ছাড়াও ক্রিয়েটররা এখন কথা বলছেন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তরুণদের নেতৃত্ব দিতে তারা ভূমিকা রাখছে বিশেষভাবে। শিক্ষা খাতের বহু বিষয়বস্তু তুলে ধরছেন শিক্ষক আর শিক্ষার্থী। এতে দর্শকরদের মধ্যেও নতুনভাবে শিখতে উৎসাহী হচ্ছে। শিক্ষামূলক কনটেন্টের প্রসারকে আরও এখন ত্বরান্বিত করছে টিকটকের ‘স্টেম ফিড’। বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটররাও টিকটকে তাদের স্টেম কনটেন্ট তুলে ধরছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত অর্থাৎ স্টেম সম্পর্কিত কনটেন্টগুলো এখন উঠে আসছে টিকটকের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মাধ্যমে।
শিক্ষায় ও পরিবর্তনে ক্রিয়েটর
আর্ট, গান, নাচ থেকে শুরু করে প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় সৃজনশীলতা তুলে ধরছে টিকটক প্ল্যাটফর্মের কনটেন্ট ক্রিয়েটররা। আর স্টেম ফিডের মাধ্যমে তারা এখন বিশেষভাবে তৈরি করছেন শিক্ষামূলক কনটেন্ট, যা তথ্যবহুল এবং একই সঙ্গে বিনোদনমূলক। বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কোডিং টিপস বা তথ্য বিশ্লেষণ সবকিছুই সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে স্টেম ফিডে তুলে ধরছেন ক্রিয়েটররা।
বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতের বিষয়গুলো অনেক সময় জটিল মনে হতে পারে। স্টেম ফিডের ক্রিয়েটররা সেই বিষয়গুলোকে সহজ ও মজাদার করেছে। সংক্ষিপ্ত ও আকর্ষণীয় ভিডিওর মাধ্যমে শেখানো হচ্ছে এসব বিষয়, যেখানে দর্শকদেরও অংশগ্রহণে উৎসাহিত করা হয়। যারা আগে কখনো এ ধরনের কনটেন্ট দেখেনি, তাদেরও স্টেম ফিডের মাধ্যমে সহজে যুক্ত করা সম্ভব। এতে ক্রিয়েটররা আরও বড় পরিসরের দর্শকের কাছে তাদের কনটেন্ট পৌঁছে দিতে পারছেন। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি নির্ভরযোগ্য শিক্ষামূলক কনটেন্টের উৎস।
স্টেম ফিড ক্রিয়েটরদের জন্য এক শক্তিশালী মাধ্যম হয়ে উঠছে। রাসায়নিক পরীক্ষা, অ্যালগরিদম প্রক্রিয়া কিংবা মহাকাশের রহস্য ব্যাখ্যা এমন নানা বিষয় ক্রিয়েটররা তাদের দর্শকদের কাছে সহজভাবে তুলে ধরছেন। এতে অন্যরাও এসব বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ছোট ও সহজ ভিডিও তৈরি করার কারণে তাদের ফলোয়ারও বাড়ছে এবং একইসাথে ব্র্যান্ড পার্টনারশিপের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
গ্লোবাল স্টেম কমিউনিটি
বিশ্বজুড়ে টিকটকের স্টেম কমিউনিটি অর্থাৎ স্টেম ভিত্তিক ক্রিয়েটর ও ফলোয়ারের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ, ক্রিয়েটর ইমানুয়েল ওয়ালেস (@big.manny1) উপস্থাপন করছেন বায়োমেডিক্যাল বিজ্ঞানের তথ্য, আর ড. কার্ল ক্রুশেলনিকি (@drkarl) জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সহজভাবে ব্যাখ্যা করছেন। এমনকি আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রি (@naturalhistorymuseum) এবং ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক(@natgeo) এর মতো প্রতিষ্ঠানও তাদের আবিষ্কার ও গবেষণাকে স্টেম ফিডের মাধ্যমে উপস্থাপন করছে।
বাংলাদেশেও ক্রিয়েটর, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যুক্ত হচ্ছেন স্টেম ফিডে। বাংলাদেশের স্টেম ক্রিয়েটর ‘ক্রিয়েটর ‘বিজ্ঞান পিআইসি’ জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং মহাবিশ্ব বিষয়ক তথ্যবহুল ভিডিও তৈরি করছেন। ‘আমি বিজ্ঞানী’ ক্রিয়েটর প্রকৌশল ও উদ্ভাবনভিত্তিক বিষয় নিয়ে কাজ করছেন এবং ছোট মডেলে বড় ধারণা শেখাচ্ছেন। অন্যদিকে, ‘কচু বিজ্ঞানী প্রো’ কমেডির ছলে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা উপস্থাপন করছেন। নিজস্ব ও স্থানীয়ভাবে প্রাসঙ্গিক এমন কনটেন্ট তৈরি করে দেখাচ্ছেন ক্রিয়েটররা। স্টেম ফিড বিজ্ঞান, গণিত এবং প্রযুক্তির জগতে আগ্রহী করে তুলছে টিকটক ইউজারদের এবং স্তব জীবনের সঙ্গে এসব জ্ঞানের সম্পর্ক বুঝতেও সহায়তা করছে।
মানসম্পন্ন ও প্রাসঙ্গিক কনটেন্ট
স্টেম কনটেন্টের ক্ষেত্রে টিকটক তিনটি মূল নীতিতে গুরুত্ব দেয়; গুণগত মান, প্রাসঙ্গিকতা এবং অংশগ্রহণ। গুণগত মান অর্থাৎ কনটেন্ট যেন নির্ভরযোগ্য, সঠিক ও শিক্ষণীয় হয়, তা নিশ্চিত করতে স্টেম ফিডে থাকা ভিডিওগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে যাচাই করা হয় এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে মান বজায় রাখা হয়।
শেখার বিষয়গুলো স্থানীয় প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক হতে হবে। এ কারণেই বাংলাদেশের ক্রিয়েটর, শিক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের উৎসাহিত করা হয় যেন তারা নিজেদের আইডিয়া, উদাহরণ ও উদ্ভাবন স্টেম ফিডে তুলে ধরেন। এতে দর্শকরা কনটেন্টের বিষয়বস্তু আরও সহজে বুঝতে পারে। শিক্ষক, ক্রিয়েটর ও শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণকে টিকটক গুরুত্ব দেয়। কারণ, এদের সবাইকে নিয়েই শিক্ষামূলক কনটেন্টের জন্য তৈরি হতে পারে একটি বৃহৎ ও সক্রিয় কমিউনিটি।
শেখার নতুন উপায়
শিক্ষাকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন করতে হয়। বর্তমানে মনোযোগের সময় কমে আসছে, অথচ তথ্য বা জ্ঞান দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার্থীরাও এখন চায় ইন্টার্যাকটিভ ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক শেখা। টিকটকের স্টেম ফিড সেই পরিবর্তনেরই অংশ, যেখানে শেখার পদ্ধতিকে করা হয়েছে আরও আকর্ষণীয়, সহজ ও অংশগ্রহণমূলক।
বাংলাদেশের জন্য টিকটকের স্টেম ফিড এমন এক সুযোগ, যেখানে শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সবাই—ক্রিয়েটর, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী—তাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে পারেন। ডিজিটাল দুনিয়ায় সবাই এখানে যুক্ত হতে পারে পারস্পরিক তথ্য ও শেখার আদান-প্রদানে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নিয়ে শিক্ষালাভ সহজ হলে, এর বাস্তব প্রয়োগও প্রতিদিনের জীবনে আরও স্পষ্টভাবে বোঝা যাবে।
লেখক: টিকটক এর দক্ষিণ-এশিয়ার কনটেন্ট অপারেশনস লিড