
চট্টগ্রামের সাগরিকায় আজ সন্ধ্যা ৬টায় সিরিজ বাঁচানোর ম্যাচে নামছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটারদের দায়িত্বজ্ঞানহীন পারফরম্যান্সে হারতে হয়েছে লিটন দাসের দলকে। সেই ব্যর্থতার দায় স্পষ্ট করে ব্যাটারদের কাঁধেই চাপিয়েছেন অধিনায়ক। টাইগার বাহিনী সেই দায় থেকে মুক্ত হতে পারবে কি না, তারই পরীক্ষা হবে।
প্রথম ম্যাচে পাওয়ারপ্লেতেই ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে কার্যত ছিটকে যায় বাংলাদেশ। সেই ধাক্কা থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি দল। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে পেসার তানজিম হাসান সাকিবও স্বীকার করেছেন, টপ অর্ডারের ব্যর্থতাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, ‘উইকেটগুলো হারিয়েছি পাওয়ারপ্লেতে। তারা যদি সেট হয়ে আউট হতো, আলাদা একটা দৃশ্য হতো। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাটারই সেট হওয়ার আগেই আউট হয়ে গেছে।’
তানজিম সাকিবের মতো একই সুর ছিল অধিনায়ক লিটন দাসের কণ্ঠেও। বিশেষ করে মিডল অর্ডারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যাটিং নিয়ে। ৪ বলে ১ রান করে বোল্ড হয়ে যাওয়া শামীম হোসেন পাটোয়ারির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘আমরা পাওয়ারপ্লেতে অনেক বেশি উইকেট হারিয়ে ফেলেছি। আমি শামীমের ব্যাটিং নিয়ে অনেক হতাশ। তাকে এটা নিয়ে ভাবতে হবে। সবসময় শুধু উপভোগ করে চলে গেলে হবে না। দায়িত্ব নিতে হবে।’ শেষ দিকে শিশির পড়ায় উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আরো সহজ হয়ে উঠলেও বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিতে পারেনি।
তানজিম সাকিবের ভাষায়, ‘শেষের দিকে বল ব্যাটে ভালো আসছিল। যদি একজন সেট ব্যাটার থাকত, ম্যাচটা অন্যরকম হতো।’ আজ সিরিজ রক্ষার ম্যাচে তাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের ব্যাটারদের সামনে-দায়িত্ব নিয়ে খেলতে পারবে কি না তারা? প্রথম ম্যাচের ভুল শুধরে নিজেদের প্রমাণের মঞ্চ আজই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিতলে সিরিজ তাদের হাতে চলে যাবে, আর বাংলাদেশ জিতলে সিরিজ নির্ধারণ হবে তৃতীয় ম্যাচে।
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে হারের পর বাংলাদেশের জন্য আজকের ম্যাচটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজে টিকে থাকতে হলে সাগরিকার মাঠে জয়ের বিকল্প নেই। মিরপুরের ধীরগতির কালো মাটির উইকেট থেকে একেবারেই ভিন্ন চরিত্রের চট্টগ্রামের উইকেট-এখানে সাধারণত ব্যাটারদের জন্য একটু বেশি সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়। তবে উইকেট যত ভালোই হোক, ব্যাটারদের দায়িত্বশীল ইনিংস ছাড়া বড় রান তোলা সম্ভব নয়। বিশেষ করে টপ অর্ডারের ব্যাটারদের শুরুটা কাজে লাগিয়ে সেট হয়ে দীর্ঘ ইনিংস খেলার প্রয়োজন আছে। অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল প্রথম ম্যাচে জয় পেয়েও আত্মতুষ্টিতে ভুগছে না।
তারা গতকাল অপশনাল অনুশীলনে নেমে নিজেদের কিছুটা ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এমন মনোযোগী প্রস্তুতি তাদের মানসিক দিক থেকে এগিয়ে রাখবে। ক্যারিবিয়ান ব্যাটাররা প্রথম ম্যাচে স্পিনারদের সামলে যেভাবে ইতিবাচক ক্রিকেট খেলেছে, সেটি বাংলাদেশের জন্য বাড়তি সতর্কবার্তা। বাংলাদেশ দল বিশ্রাম নিলেও, সেটি কার্যকর বিশ্রাম হতে হবে শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও।
প্রথম ম্যাচে ব্যাটিং বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া এখন মূল চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে লিটন, তাওহীদ হৃদয়দের দায়িত্ব হবে দলকে মজবুত ভিত গড়ে দেওয়া। সাগরিকার উইকেট যদি ব্যাটিংয়ের পক্ষে থাকে, তাহলে আজ বাংলাদেশের জন্য সেট হয়ে খেলার মানসিকতা সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। ব্যাটারদের দায়িত্বশীলতা, ফিল্ডিংয়ে ধারাবাহিকতা এবং বোলারদের শৃঙ্খল-এই তিনটি জায়গায় উন্নতি আনতে পারলে বাংলাদেশ আজ ম্যাচে ফিরতে পারবে। অন্যথায়, সিরিজটা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।