
বাংলাদেশি স্থপতি মেরিনা তাবাশ্যুমের নকশা করা অভিনব আবাসন প্রকল্প ‘খুদি বাড়ি’ মর্যাদাপূর্ণ আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার ২০২৫ অর্জন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর আবাসন সমস্যার টেকসই সমাধানে উদ্ভাবনী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর কিরগিজ প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বিশকেকের টকতোগুল সাইতলগানোভ ন্যাশনাল ফিলহারমোনিক হলে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উজবেকিস্তানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও কিরগিজ প্রজাতন্ত্রে এক্রিডিটেড মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম।
এর আগে মেরিনা তাবাশ্যুম ২০১৬ সালে ঢাকার বায়তুর রউফ মসজিদ প্রকল্পের জন্যও একই পুরস্কার লাভ করেছিলেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি স্থপতি হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করলেন।
আওয়ার্ড ঘোষণায় জানানো হয়, ‘খুদি বাড়ি’ প্রকল্প স্থানচ্যুত ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সহজে খোলা–জোড়া লাগানো যায় এমন সাশ্রয়ী, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব আবাসন মডেল। স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য বাঁশ ও নির্মাণকৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে এসব বাড়ি দ্রুত স্থাপনযোগ্য করা হয়েছে। বন্যার সময় বাড়ির দ্বিতীয় তলা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। প্রতিটি বাড়ি নির্মাণ খরচ প্রায় ৪৫০ মার্কিন ডলার, যা প্রচলিত আবাসনের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী।
আওয়ার্ড কমিটি প্রকল্পটির চারটি দিককে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করেছে: স্থানীয় উপকরণ ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণ, পরিবেশবান্ধব নকশা, সাশ্রয়ী ব্যয় এবং বৈশ্বিক প্রাসঙ্গিকতা। ইতোমধ্যেই এর মডুলার কাঠামো রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নারী-নেতৃত্বাধীন স্থাপনাতেও প্রয়োগ করা হয়েছে।
আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচারের স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান প্রিন্স রহিম আগা খান ভি বলেন, ‘আজকের স্থাপত্যকে অবশ্যই জলবায়ু সংকট মোকাবিলা, শিক্ষা বিস্তার ও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ হতে হবে। এর মধ্য দিয়েই আমরা ভবিষ্যতের জন্য মর্যাদা ও আশার ভিত্তি স্থাপন করতে পারি।’
১৯৭৭ সালে প্রিন্স করিম আগা খান চতুর্থ এ পুরস্কার প্রবর্তন করেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বা গুরুত্বপূর্ণ উপস্থিতি রয়েছে এমন অঞ্চলের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশগত চাহিদা পূরণে অবদান রাখে এমন স্থাপত্যকেই এ পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রতি তিন বছরে একবার আয়োজিত এ পুরস্কারের অর্থমূল্য ১০ লাখ মার্কিন ডলার, যা বিজয়ীদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়।
‘খুদি বাড়ি’র পাশাপাশি আরও ছয়টি প্রকল্প এবার আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার পেয়েছে:
- ওয়েস্ট উসুতু ভিলেজ কমিউনিটি সেন্টার (চীন) – পুনর্ব্যবহৃত ইট দিয়ে নির্মিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
- ঐতিহাসিক এসনা শহর পুনরুজ্জীবন (মিসর) – পর্যটন ও সামাজিক উন্নয়ন উদ্যোগ।
- মাজারাহ রেসিডেন্স ও কমিউনিটি রিডেভেলপমেন্ট (ইরান) – হরমুজ দ্বীপে টেকসই পর্যটন আবাসন।
- জাহাদ মেট্রো প্লাজা (ইরান) – তেহরানের জরাজীর্ণ স্টেশনকে প্রাণবন্ত নগরকেন্দ্রে রূপান্তর।
- ভিশন পাকিস্তান (পাকিস্তান) – সুবিধাবঞ্চিত তরুণদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণকেন্দ্র।
- ওয়ান্ডার ক্যাবিনেট (প্যালেস্টাইন) – বেথলেহেমে কারুশিল্প, উদ্ভাবন ও শিক্ষার জন্য বহুমুখী কেন্দ্র।