
বাণিজ্য ঘাটতি কমলে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা পাল্টা শুল্ক কমানোর আশ্বাস দিয়েছে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদল।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চের নেতৃত্বে সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরও কিছুটা কমানোর বিষয়ে আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে তিনদিনের সফরে ঢাকায় এসেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমাদের যে চলমান আলোচনার রয়েছে, সেটার ধারাবাহিকতায় আজকে তাদের টিমের সঙ্গে বসেছি। আমাদের যে অ্যাগ্রিমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক, কান্ট্রি স্পেসিফিক কমিটমেন্ট—এ বিষয়ে যে আলোচনাগুলো চলছিল, আমাদের জয়েন্ট ডিক্লারেশনের রেফারেন্সে আলোচনা করেছি আজকে।
কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা যেটি বলেছি- বাণিজ্য ঘাটতি কমার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শুল্ককে নিম্নমুখী পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। ওনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। শুল্ক কমার সম্ভাবনা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো শুল্কচুক্তি হয়নি জানিয়ে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চুক্তি করার লক্ষ্যে এ আলোচনাগুলো হচ্ছে। যে ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, চুক্তিকে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার উদ্দেশেই এ আলোচনাগুলো হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যে পণ্যসম্ভার নিয়ে আলোচনা করেছি, সেই পণ্যগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি। আমাদের যে (যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে) বিমানসহ বিভিন্ন জিনিস কেনার অঙ্গীকার রয়েছে সেগুলোর অগ্রগতি আমরা পর্যালোচনা করেছি।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এটি (বাণিজ্য ঘাটতি) সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে, বাণিজ্য ঘাটতি কমছে। তাতে আমাদের উভয়েরই অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়ছে। যে কয়েকটি পণ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছি, তার একটি হচ্ছে কৃষিপণ্য, অন্যটি জ্বালানি পণ্য। উভয় পণ্যই এখন সাশ্রয়ী মূল্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিনতে পারছি। তাই আমাদের অগ্রগতি হচ্ছে। এর বাইরেও আমরা প্রচেষ্টায় আছি। পর্যালোচনায় আমাদের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলেই আমরা মনে করছি।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার ওপর নির্ভর করে আমরা আমাদের পোশাকশিল্পে আরেকটু অতিরিক্ত শুল্ক আদায়ের চেষ্টা করছি। আমাদের আজকে আলোচনার এটা অন্যতম একটা লক্ষ্য ছিল। আমরা মনে করছি সেক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। আমরা যদি প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি আমাদের শুল্ক হ্রাসের আরও সম্ভাবনা রয়েছে।
শুল্ক কমানোর বিষয়টি বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সঙ্গে সংযুক্ত বলেও জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, তাদের (যুক্তরাষ্ট্র) সঙ্গে আমাদের ছয় বিলিয়নের মতো বাণিজ্য ঘাটতি আছে। আগের বারে আমরা কমিটমেন্ট দিয়েছিলাম যে, আমরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে গম কিনি, সয়াবিন কিনি। তাদের দেশও সারা পৃথিবীতে এগুলো বিক্রি করে। তাদের দেশ থেকে এগুলো আনলে আমরা বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি, কিছু সুবিধা পেতে পারি। আমরা তাদের জানিয়েছি আমরা যে কমিটমেন্ট করেছিলাম, সেখানে কতটুকু অগ্রগতি হয়েছে। অগ্রগতি হয়েছে তো, গত অর্থবছরে আমরা ৬০০ মিলিয়ন ডলার তুলা কিনেছি। এ বছর দুই মাসেই ২৭৬ মিলিয়ন হয়েছে, গম কিনেছি। বেড়েছে তো। এগুলোই আমরা তাদের বলেছি।
কবে শুল্ক চুক্তি হবে, সে বিষয়ে তারা ফিরে গিয়ে একটা সময় জানাবে বলেও জানান সচিব।
রাশিয়ার চেয়ে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম কেনা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, আমেরিকার গম ও রাশিয়ার গমের মধ্যে তুলনামূলকভাবে গুণগত পার্থক্য রয়েছে। আমেরিকার গমের প্রোটিন কনটেন্ট রাশিয়ার গ্রামের প্রোটিন কনটেন্টের চেয়ে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ ভাগ বেশি।
প্রোটিনের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দেশের গমের মূল্যের পার্থক্য হয় বলেও জানান উপদেষ্টা।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং-এর থেকে বিমান কেনার বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আজ কেনার অর্ডার দিলাম, সামনের বছর পেয়ে গেলাম এমন ঘটনা ঘটবে না। এটি দীর্ঘমেয়াদে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে।