
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় থাকা ফ্রান্সে চলছে ‘ব্লক এভরিথিং’ আন্দোলন। গতকাল বুধবার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত দেশজুড়ে ৬৭৫ জনকে আটক করা হয়েছে। এখনো চলছে ধরপাকড়।
মূলত ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর নেতৃত্ব এবং নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ জনতা অনলাইনে বিক্ষোভ আহ্বানের পর হাজার হাজার জনতা রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীরা দেশজুড়ে স্বাভাবিক কার্যকলাপে বাঁধা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। এ সবস্থায় রাজধানী প্যারিসসহ বিভিন্ন শহরে অন্তত ৮০ হাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
ফরাসি সংবাদ সম্প্রচারক বিএফএম টিভি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, ‘ব্লক এভরিথিং’ বিক্ষোভের সময় এখন পর্যন্ত দেশব্যাপী ৬৭৫ জনকে আটকের তথ্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে প্যারিস অঞ্চল থেকেই ২৮০ জন আটক হয়েছে।
ফরাসি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, বুধবার থেকে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের ঘটনার পর আটককৃতদের মধ্যে ৫৪৯ জনকে ‘হেফাজতে নেওয়া হয়েছে’।
প্যারিসের পুলিশপ্রধান লরেন্ট নুনেজ বলেন, ‘আজ সকালেও আমরা ২৮০ জনকে গ্রেপ্তার করেছি।’
বিতর্কিত জাতীয় বাজেট পরিকল্পনা
সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হওয়া জনতার ক্ষোভ ১০ সেপ্টেম্বর ‘ব্লক এভরিথিং’ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে রাজপথে গড়ায়। এর লক্ষ্য হলো, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেয়ারুর জাতীয় বাজেট পরিকল্পনার বিরোধিতা করে দেশের কার্যক্রম থামিয়ে দেওয়া।
ফ্রান্স আনবোউড (এলএফআই) দলের সমর্থনে আন্দোলন গতি লাভ করে। আন্দোলনের সূত্রপাত হয় একটি ছোট অনলাইন গ্রুপ ‘লেস এসেনটিয়েলস’ থেকে। সেখানে বলা হয়েছে: ‘১০ সেপ্টেম্বর আমরা সবকিছু বন্ধ করে দেব, পালানোর জন্য নয়, না বলার জন্য নয়।’
ইতোমধ্যে ফরাসি ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠনগুলোও বেয়ারুর বাজেট প্রস্তাবের প্রতিবাদে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর দেশজুড়ে এক সমাবেশ দিবসের ডাক দিয়েছে।
এরই মধ্যে গত সোমবার জাতীয় পরিষদে আস্থা ভোটে প্রধানমন্ত্রীর পতনের পর ফ্রান্স ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মুখোমুখি হচ্ছে।
এরপর মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সশস্ত্র বাহিনী বিষয়ক মন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নুকে দেশের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করেন। নতুন সরকার গঠনের আগে তাকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের বাজেট ঘাটতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম বৃহত্তম, অর্থাৎ জিডিপির ৫.৮%। ফরাসি রাজনীতিতে বাজেট আলোচনা উত্তেজনার একটি প্রধান উৎস।
গত বছর ২০২৫ সালের বাজেটের বিষয়ে কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থতার ফলে ডিসেম্বরে মিশেল বার্নিয়ার সরকারের পতন ঘটে।