
ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬ ঘিরে সারা বিশ্বে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তার স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে টিকিট বিক্রির নতুন রেকর্ডের মাধ্যমে। ইতিমধ্যে টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ধাপে বিক্রি হয়েছে প্রায় দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) টিকিট। যা বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম দ্রুত বিক্রি হওয়া টিকিট পর্ব হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
২০০টির বেশি দেশ থেকে ফুটবলপ্রেমীরা টিকিট ক্রয় করেছেন। যেখানে সবচেয়ে বেশি টিকিট ক্রয় করেছেন তিন আয়োজক দেশের সমর্থক যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকোর বাসিন্দারা। তাদের পরে রয়েছে ইংল্যান্ড, জার্মানি, ব্রাজিল, স্পেন, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া ও ফ্রান্সের সমর্থকরা।
তৃতীয় ধাপের টিকিট বিক্রি শুরু হবে আগামী ১১ ডিসেম্বর। চলবে ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে টুর্নামেন্টের চূড়ান্ত ড্র, যার পরপরই প্রকাশ পাবে পূর্ণাঙ্গ ম্যাচসূচি। এরপরই ভক্তরা নির্দিষ্ট ম্যাচ দেখে দলভিত্তিক একক ম্যাচের টিকিটের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
২০২৬ সালের বিশ্বকাপে ভিসা সংক্রান্ত বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশ্বকাপের বিগত আসরগুলোতে দর্শকদের জন্য ফ্যান আইডির সুবিধা ছিল। বৈধ ম্যাচের টিকিটের সঙ্গে এই কার্ড দেখালেই দর্শকরা ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার পেতেন। এছাড়াও, এই কার্ড ব্যবহার করে দর্শকরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিনামূল্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করতে পারতেন। এর মূল লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক দর্শকদের ভ্রমণ প্রক্রিয়া সহজ ও নিরাপদ করা।
তবে ২০২৬ সালের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আয়োজক তিনটি দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা এবং মেক্সিকো যৌথভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজন করছে, যেখানে প্রত্যেক দেশের নিজস্ব সীমান্ত ও কঠোর ভিসা নীতি রয়েছে। ফলে দর্শকদের ফিরতে হচ্ছে প্রথাগত, দেশভিত্তিক ভিসা প্রক্রিয়ায়। ২০১৮ বা ২০২২ সালের মতো ফ্যান আইডি ব্যবস্থা থাকছে না। দর্শকদের প্রতিটি দেশের জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে গিয়ে সাধারণ ভ্রমণ ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি, ইলেকট্রনিক ট্রাভেল অথরাইজেশনের অনুমোদনও প্রয়োজন হতে পারে, যা নির্ভর করবে দর্শকের জাতীয়তার ওপর।
অন্যদিকে, টুর্নামেন্টকে আরও সহজলভ্য করতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও ফিফা যৌথভাবে এক যুগান্তকারী সুবিধা চালু করেছে। ফিফার অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা। এই সুবিধার ফলে ফিফা বিশ্বকাপ ২০২৬-এর টিকিটধারীরা যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভিসা সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উদ্যোগে চালু হওয়া এই পরিষেবা ২০২৬ সালের শুরুতেই কার্যকর হবে।
হোয়াইট হাউজে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় উপস্থিত ছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নয়েম, হোয়াইট হাউস টাস্ক ফোর্সের সদস্যরা এবং ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। ইনফান্তিনো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে স্বাগত জানায়। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্বকাপ আয়োজনের পথে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও সমর্থকদের দ্রুত ভিসার জন্য আবেদন করার আহ্বান জানান। ২০২৬ সালের টুর্নামেন্টটি অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহর, মেক্সিকোর ৩টি এবং কানাডার ২টি শহরে। ৬ মিলিয়নের বেশি টিকিট নিয়ে উত্তর আমেরিকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই বিশ্বকাপ। এই বিশ্বকাপকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি হবে ১ লাখ ৮৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান, আর দেশটির জিডিপিতে যুক্ত হবে ১৭.২ বিলিয়ন ডলার।
ফিফা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সমীক্ষায় এমনটাই বলা হয়েছে। টিকিট ক্রয় ও ভিসা সংক্রান্ত সকল অফিশিয়াল প্রক্রিয়া পাওয়া যাবে শুধুমাত্র ফিফার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে। সমর্থকদের সতর্ক করে বলা হয়েছে। অফিশিয়াল উৎস ছাড়া অন্য কোথাও থেকে টিকিট না কেনার জন্য।