
তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মীরের অন্যতম শীর্ষ স্বাধীনতাপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত ইয়াসিন মালিক বর্তমানে নয়াদিল্লির তিহার কারাগারে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন। একসময় সশস্ত্র সংগ্রামের প্রতীক হলেও পরবর্তীতে তিনি অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেন। তবে আগস্টের শেষ দিকে দিল্লি হাইকোর্টে দাখিল করা তার এক হলফনামা নতুন করে আলোচনায় এনেছে কাশ্মীর ইস্যু।
৫৯ বছর বয়সী মালিকের দাবি, ১৯৯০-এর দশক থেকেই তিনি ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, গোয়েন্দা প্রধান এবং এমনকি আরএসএস ও হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও তার বৈঠক হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, মুম্বাই হামলার পেছনে দায়ী হিসেবে পরিচিত লস্কর-ই-তৈয়বার প্রতিষ্ঠাতা হাফিজ সাঈদের সঙ্গে তার বৈঠকও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশেই হয়েছিল।
১৯৮৭ সালের কারচুপিপূর্ণ নির্বাচনকে কাশ্মীর বিদ্রোহের সূত্র বলে অভিহিত করেন মালিক। সেসময় ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি পাকিস্তানে যান এবং প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসে জম্মু ও কাশ্মীর লিবারেশন ফ্রন্টের নেতৃত্ব দেন। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বদলে স্বাধীন কাশ্মীরের দাবিতে অবস্থান নেওয়ায় ইসলামাবাদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়।
১৯৯৪ সালে কারাগার থেকে মুক্তির পর মালিক প্রকাশ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম ত্যাগ করেন এবং অহিংস আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। বছরের পর বছর কাশ্মীরের রাজনৈতিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে তিনি ছিলেন অগ্রভাগে। কিন্তু ২০১৯ সালে পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং জেকেএলএফ নিষিদ্ধ হয়।
মালিকের দাবি, ভারত সরকার দীর্ঘদিন তাকে আশ্বাস দিয়েছিল, তিনি অহিংস থাকলে তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আনা হবে না। অথচ এখন জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করার চেষ্টা করছে। তার মতে, এই পদক্ষেপ বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
হলফনামায় তিনি আরও প্রকাশ করেছেন, ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর কাশ্মীরজুড়ে বিক্ষোভ প্রশমনে তিনি সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন। এমনকি বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানিকে ধর্মঘট স্থগিত করতে রাজি করিয়েছিলেন। এছাড়া ব্যবসায়ী ধীরুভাই আম্বানির সঙ্গেও তার গোপন আলোচনার কথা উল্লেখ করেছেন।
এই দাবিগুলো কতটা বিশ্বাসযোগ্য- তা নিয়ে বিভক্ত বিশ্লেষক মহল। কেউ কেউ মনে করেন, মালিক একাধিক পক্ষকে কাজে লাগিয়েছেন এবং রাষ্ট্রও তাকে ব্যবহার করেছে। অন্যরা বলছেন, তার বক্তব্য কাশ্মীরের সংঘাতময় বাস্তবতার আড়ালের গল্প উন্মোচন করে। তবে এক বিষয় স্পষ্ট- ইয়াসিন মালিককে ঘিরে বিতর্ক এখনো কাশ্মীর রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।