
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশ এবং মুখোশধারী বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর ২০০ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে আঞ্চলিক পুলিশ বলেছে, আগের দিনের বেশিরভাগ সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও আয়ালা ব্রিজ এবং মেন্ডিওলায় সমাবেশ কোনো উস্কানি ছাড়াই অত্যন্ত সহিংস হয়ে ওঠে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশ অফিসারদের ওপর পাথর এবং তাদের হাতের কাছে যা পেয়েছে তা দিয়েই আক্রমণ করেছে। শুধু পুলিশ অফিসারদের ক্ষতি করেই সন্তুষ্ট হয়নি, হিংস্র বিক্ষোভকারীরা মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়, একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর এবং লুটপাটও করে।
এতে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ ২২৪ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নাবালকও ছিল।
সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩১ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর, তারা এখন চিকিৎসাধীন।
গতকাল রোববার হাজার হাজার মানুষ ম্যানিলায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত দুর্নীতি কেলেঙ্কারির বিরুদ্ধে সমাবেশে অংশ নেয়। যদিও বিক্ষোভটি প্রথমে শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু কেউ কেউ হিংস্রতার পথ বেছে নেয়।
পুলিশ বলেছে, ‘যারা দেয়ালে গ্রাফিতি করেছে, স্টিলের খুঁটি ভেঙে ফেছে, কাচের প্যানেল ভেঙেছে এবং একটি জনপ্রিয় রাস্তার ধারে লবিতে ভাঙচুর করেছিল – তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার করেছিল।’
আঞ্চলিক পুলিশের মুখপাত্র মেজর হ্যাজেল আসিলো এএফপিকে বলেন, ‘আটককৃতদের কেউই এখন পর্যন্ত তাদের মতামত বা এটি করার জন্য অর্থ পেয়েছে কিনা, তা প্রকাশ করেননি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখনই আমরা তাদের সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানতে পারব, তখনই বোঝা যাবে তারা বিক্ষোভকারীদের অংশ ছিল নাকি শুধুমাত্র ঝামেলা তৈরি করতে গিয়েছিল।’
ম্যানিলা থেকে আল জাজিরার রিপোর্টার বার্নাবি লো বলেন, সোমবার সকালে ম্যানিলার রাস্তায় কিছুটা স্বাভাবিকতা ফিরে এসেছে। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তও চলমান রয়েছে। বিক্ষোভের আরও আশঙ্কা রয়েছে, তবে এই মুহূর্তে সেগুলো অনিশ্চিত।
উল্লেখ্য, গত জুলাই মাসে প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র রাষ্ট্রীয় ভাষণে ভুতুড়ে অবকাঠামো প্রকল্পগুলো উন্মোচন করলে, তখন থেকেই ফিলিপিনোদের মধ্যে ক্ষোভ বেড়ে চলেছে।
ছাত্র-কর্মী আলথিয়া ত্রিনিদাদ অ্যাসোসিয়েটেডকে বলেছে, ‘আমার খারাপ লাগছে যে, আমরা দারিদ্র্যের মধ্যে ডুবে আছি। আমরা আমাদের ঘরবাড়ি, আমাদের জীবন এবং আমাদের ভবিষ্যৎ হারাচ্ছি। অন্যদিকে তারা আমাদের করের টাকা দিয়ে বিলাসবহুল গাড়ি, বিদেশ ভ্রমণ এবং বৃহত্তর কর্পোরেট লেনদেন করছে।’
অর্থ বিভাগের মতে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পে দুর্নীতির কারণে ২০২৩-২০২৫ সাল পর্যন্ত ফিলিপাইনের অর্থনীতি ১১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন পেসো (২ বিলিয়ন ডলার) পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইন্দোনেশিয়া এবং নেপালসহ অন্যান্য এশীয় দেশগুলোতে সরকারি আচরণ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়।