
গ্র্যান্ড স্লামের ক্যালেন্ডারে শুক্রবার পুরুষ একেকের সেমিফাইনালের নাম থাকলেও, আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামের গ্যালারি জানে এটাই আসল ফাইনাল। একদিকে নোভাক জোকোভিচ, ২৪ গ্র্যান্ড স্লামের সম্রাট। ইতিহাসের পাতায় নাম খোদাই করা এক কিংবদন্তি, স্বপ্ন তার ২৫তম গ্র্যান্ড স্লাম জয়ের।
অন্যদিকে কার্লোস আলকারাজ তারুণ্যের আগুনে গড়া টেনিসের নতুন রাজপুত্র, যে প্রতিটি ম্যাচে ঘোষণা দিচ্ছে, ভবিষ্যৎ এখন তার। এ লড়াই শুধু জয়-পরাজয়ের নয়, এটি প্রজন্মের সংঘর্ষ। রেকর্ড বনাম ক্ষুধা, অভিজ্ঞতা বনাম বিস্ফোরণ, রাজত্ব টিকিয়ে রাখা বনাম নতুন রাজত্ব দখল-সব মিশে গেছে এই মহারণে। ফাইনালে ওঠার টিকিট এখানে পুরস্কার বটে, কিন্তু প্রকৃত পুরস্কার মর্যাদা, আধিপত্য আর মানসিক শ্রেষ্ঠত্ব। তাই টেনিস বিশ্বের চোখে আগামীকালকের ম্যাচ ফাইনালের আগেই এক ফাইনাল।
গতকাল শেষ আটের লড়াইয়ে টেলর ফ্রিটজের বিপক্ষে নিজের সেরাটা না খেলেও অভিজ্ঞতার জোরে চার সেটে জয় ছিনিয়ে নেন জোকোভিচ। ম্যাচে ১৩টি ব্রেক পয়েন্টের মধ্যে ১১টি বাঁচান তিনি, যা প্রমাণ করে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এখনো কতটা ‘ক্লাচ’ খেলোয়াড় সার্বিয়ান তারকা। এই ম্যাচের শুরুটা তিনি দুর্দান্ত করলেও মাঝে খেই হারিয়ে ফেলেন, তবে শেষ পর্যন্ত ৬-৩, ৭-৫, ৩-৬, ৬-৪ গেমে জিতে টানা ১১তম বার ফ্রিটজকে হারিয়েছেন জোকোভিচ। লড়াইটি চলেছে ৩ ঘণ্টা ২৪ মিনিট।
অন্যদিকে চলমান ইউএস ওপেনে স্প্যানিশ তরুণ তারকা আলকারাজ যেন ছুটছেন ঝড়ের গতিতে। জোকোভিচের ম্যাচের আগে কোয়ার্টার ফাইনালে চেক প্রজাতন্ত্রের জিরি লেহেকার বিপক্ষে মাত্র ১ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটেই সরাসরি সেটে জয় পান বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে আলোচিত তারকা। ৬-৪, ৬-২, ৬-৪ গেমে জেতা সেই ম্যাচে একবারের জন্যও ব্রেক পয়েন্টের মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। পুরো ম্যাচে মারেন ২৮টি দুর্দান্ত উইনার্স। টুর্নামেন্টে এখনো একটি সেটও হারেননি তিনি। ষষ্ঠ গ্র্যান্ড স্লাম শিরোপার খোঁজে আছেন মাত্র ২২ বছর বয়সী এই স্প্যানিশ।
এবার পালা ফাইনালের টিকিট কাটার। যেখানে মুখোমুখি দুই প্রজন্মের দুই টেনিস তারকা। যদিও দ্বন্দ্বের ইতিহাস জোকোভিচের পক্ষে। সর্বশেষ জানুয়ারিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে আলকারাজকে হারিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যান সার্বিয়ান। হার্ড কোর্টে তিনবার মুখোমুখি হয়ে প্রতিবারই জয় এসেছে জোকোভিচের হাতে। এ ছাড়া গ্র্যান্ড স্লামে এখন পর্যন্ত চার বার খেলেছেন এই দুই তারকা, যেখানে দুজনের জয় সমান ২টি করে।
তবে সাম্প্রতিক ফলাফলের চিত্র আলাদা গল্প বলে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও প্যারিস অলিম্পিকে সোনালি মুহূর্তটা সার্বিয়ানই কুড়িয়ে নিয়েছেন। তবু আলকারাজ খেলছেন এমন টেনিস, যেন দেবতারা নিজে ছকে দিয়েছেন তার প্রতিটি শট। এছাড়া এবারের ইউএস ওপেনে আলকারাজের পারফরম্যান্স এতটাই নিখুঁত যে, অনেকেই তাকে এই ম্যাচে ফেভারিট মানছেন। নিজেও আত্মবিশ্বাসী তরুণ তারকা, বিশেষ করে গত কয়েক মাসে জোকোভিচের বিপক্ষে পাওয়া কষ্টদায়ক হারের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া তিনি।
তবে জোকোভিচের স্বপ্নের ২৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কাজটা যে সহজ হবে না তা বলাই যায়। সেই হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন সার্বিয়ান এই টেনিস সম্রাট। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে স্প্যানিশ বিপক্ষের ম্যাচ নিয়ে জোকোভিচ বলেন, ‘এটা সহজ হবে না। শরীরটা চাঙা করে তুলতে আগামী কয়েকটি দিন আমার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। দরকার হলে পাঁচ সেটের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে… জানি নিজের সেরা টেনিসটাই খেলতে হবে।’
অন্যদিকে মেয়েদের এককে লড়াই ছাড়াই সেমিফাইনালে উঠেছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ও র্যাংকিংয়ে শীর্ষে থাকা আরিনা সাবেলঙ্কা। হাঁটুর চোটের কারণে কোয়ার্টার ফাইনালে তার মুখোমুখি হওয়া থেকে সরে দাঁড়ান চেক প্রজাতন্ত্রের মারকেতা ভন্দ্রসোভা। মেয়েদের দ্বৈত ইভেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে কাতেরিনা সিনিয়াকোভা ও টেলর টাউনসেন্ডের কাছে ৬-১, ৬-২ গেমে হেরে বিদায় নিয়েছেন ভেনাস উইলিয়ামস ও লেয়লা ফার্নান্দেজ জুটি।