
বড় খেলোয়াড় বলে কথা। অলিম্পিক গেমস অ্যাথলেটিকসে স্বর্ণ জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার নোয়াহ লাইলস। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে অনেক সময় মেজাজ রাখতে পারেন না, সেটি অনেকের জানা। বিশেষ করে যারা তার সঙ্গে কথা বলতে বা কথা শুনতে কাছাকাছি থাকেন। তারা সরাসরি দেখেছেন লাইলস কখনো উদার কখনো ভ্রু কুঁচকে থাকেন।
টোকিওতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে পদক জয় করতে পারেননি। জ্যামাইকান স্প্রিন্টার অবলিক সেভিল এসে স্বর্ণ পদক নিয়ে গেল। ট্র্যাকে কেমন ঝড় এসে যুক্তরাষ্ট্রের লাইলসকে গুঁড়িয়ে দিল। কেউ বুঝেই উঠতে পারলো না। সেভিলসের কাছে হারের পর আপনি এখন কেমন আছেন। লাইলসকে এই প্রশ্ন করতেই খেপে গিয়েছেন তিনি। মুহূর্তেই চেহারাটা বদলে গেল। অথচ দুই মিনিট আগেও লাইস সব সাংবাদিকের সামনে তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। মাত্রই ২০০ মিটার স্প্রিন্টার শেষ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছেন। সেখানে লাইলস যেন আরও বেশি গতিময়। তার মুখে কথার ফোয়ারা ফুটছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকরা কথা বলছেন, আর লাইলস যেন আনন্দ মনে জবাব দিচ্ছিলেন। সবার সঙ্গে কথা বলার পর বেরিয়ে যেতে ইত্তেফাক থেকে প্রশ্ন করা হলো কেমন আছেন। লাইলস জবাব দিলেন- ‘ভালো’। ১০০ মিটার স্প্রিন্টে সেভিলসের কাছে হারের পর কেমন আছেন? তখনই তিনি বললেন-‘ভালো’। বলেই আবার তাকালেন। যেন প্রশ্নটা তার পছন্দ হয়নি। তার পরও বলছেন তিনি ভালো আছেন। সুযোগ পেয়ে আবারও প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হলো-১০০ মিটারে হেরে কি রাতে ঘুম হয়েছিল? এবার খেপেই গেলেন লাইলস। উলটো তিনি ইত্তেফাককে প্রশ্ন করলেন, ‘তুমি কোন মিডিয়ার? কোথা থেকে এসেছ?’
পরিচয় দেওয়ার পর লাইলস বললেন-‘তোমার সঙ্গে কথা বলা যাবে না। তুমি পত্রিকা আমাদের না।’ অন্যদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে কথা বলতে গেলে সুযোগ পেয়ে আরও একটি কথা লাইলসের কানে তুলে দেওয়া হয়-‘লাইলস, তুমি তো প্যারিস অলিম্পিক গেমসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতে ২০০ মিটার স্প্রিন্টে পারোনি। কোভিড হয়েছিল। এবার কি সে ধরনের কোনো ভয় কাজ করছে? ক্ষুব্ধ লাইলস আমার কথা কানে না তুলে একই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলছিলেন-এখন ফিট আছি। টার্গেট করেছিলাম ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতবো। এটি এখন পুরোনো হয়ে গেছে। আমি এসব নিয়ে ভাবি না। ২০০ মিটার আছে, সেটায় মন বসিয়েছি।’
২০০ মিটার স্প্রিন্টে ডিসকোয়ালিফাই হওয়া বতসোয়ানোর সেই লেতসিল তেবেগো ফিরেছেন, যার কাছে প্যারিসে হেরেছিলেন লাইলস। লাইলসের সব ভুলে যাওয়া যায়, যখন লাইলস ২০০ মিটার হিটে ইতিহাস করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। গতকাল সেমিফাইনালে ইতিহাস গড়েছেন লাইলস। ২০০ মিটার শেষ করতে সেমিফাইনালে তার টাইমিং ছিল ১৯.৫১। একই ইভেন্টে উসাইন বোল্ট ২০০৯ সালে ফাইনালে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করেছিলেন ১৯.১৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে। সংবাদমাধ্যমের সামনে হাসতে হাসতে ঢুকলেন।
লাইলসের হাসির দিন কেঁদেছেন অস্ট্রেলীয়রা। টোকিওতে বড় অঘটন ঘটেছে। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার। গাউট গাউট নামের তরুণ স্প্রিন্টার গতকাল রাতে বিদায় নিয়েছেন। ২০০ মিটার স্প্রিন্টে ঝড় তুলতে পারেননি, ফাইনালে উঠতে পারেননি। কাল রাতে টোকিওর আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝরেছে। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাথলেটরা যেন নিজেদের চোখে পানিতে ভিজলেন। অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকরা বেরিয়ে গেলেন এক মুহূর্ত না অপেক্ষা করে।
১৭ বছরের তরুণ অ্যাথলেটকে নিয়ে যেভাবে মাতামাতি করা হয়েছিল, তা যে সঠিক ছিল না, এখন উপলব্ধি করছেন অস্ট্রেলীয়রা। ২০০ মিটার ফাইনালে উঠতে পারেননি। ২০.৩৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে গাউট চতুর্থ হয়েছেন। অ্যাথলেটিকস দুনিয়া তার দিকে তাকিয়ে ছিল, স্কুলছাত্র প্রথমবার ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে গিয়ে আসলেই মাতিয়ে দেবেন কি না। গাউটের সমালোচকরা বলছেন গাউট নাকি বুঝতে পারছেন এখনো তিনি পুচকে। এত বড় মঞ্চে আরও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন।
গাউট খেলেছেন সব সিনিয়রের সঙ্গে। কিন্তু তাদের মতো অভিজ্ঞতা নেই গাউটের। সেটি মানতে রাজি না গাউটকে আকাশে তুলে দেওয়া মানুষরা। ১০ মাস আগেও যে ছেলেটিকে কেউ চিনত না, তাকে এমনভাবে হিরো বানিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়া, যেন ট্র্যাকে নেমেই সবাইকে বোকা বানিয়ে দেবেন। গাউট দৌড় শেষ করে সংবাদমাধ্যমের কাছে জানিয়েছেন তিনি লক্ষ্য নির্ধারণ করেই এসেছিলেন। তবে এটাও মানতে বলছেন, ‘আমি সব বড় তারকার সঙ্গে লড়াই করেছি। আপনারা ভুলে যাবেন না, ভবিষ্যৎ এখনো রয়ে গেছে।’
খুবই চটপট, কথা বলেন দ্রুতগতিতে। আত্মবিশ্বাস প্রচুর। টোকিওতে এসে অনলাইনে স্কুলের পড়া পড়েছেন। পড়ার টেবিল থেকে গিয়ে লড়াই করলেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি।