
জাতিসমূহের অধিকারের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়ায়- এমন একটি জাতিসংঘে বিশ্বাস করে ইরান। আর এ জন্য জাতিসংঘে সংস্কার আনার দবি জানিয়েছে দেশটি।
জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (২৭ অক্টোবর) ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, বৈশ্বিক বিষয়গুলোর বর্তমান অবস্থা জাতিসংঘ সনদের মৌলিক নীতিগুলো সমুন্নত রাখতে কিছু ব্যর্থতার প্রতিফলন ঘটায়।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ একটি বিধ্বংসী বিশ্বযুদ্ধের ছাইয়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা মানবজাতির বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার স্মারক এবং এই ধরনের ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি রোধ করার প্রতিশ্রুতি হিসাবে কাজ করে।
বাঘাই বলেন, ‘এখন পশ্চাদপসরণ বা নিষ্ক্রিয়তার সময় নয়। আমরা ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করি; আমরা এমন একটি জাতিসংঘে বিশ্বাস করি, যা জাতির অধিকারের প্রকৃত প্রতিনিধি।’
তিনি আরও বলেন, কয়েকটি শক্তিশালী রাষ্ট্রের একতরফা ও স্বার্থপর আচরণের কারণে জাতিসংঘের প্রধান লক্ষ্য, যেমন আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখা ব্যাহত হয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, জাতিসংঘ সনদের উদ্দেশ্য এবং নীতিগুলো ওইসব দেশ বিকৃত করে চলছে। তারা এসব নীতি লঙ্ঘন করেছে – অথচ তাদের এর অভিভাবক হওয়া উচিত ছিল, বিশেষ করে নিরাপত্তা পরিষদের অভ্যন্তরে।
বাঘাই যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কিছু মিত্রকে জাতিসংঘ সনদের ‘সবচেয়ে বড় লঙ্ঘনকারী’ হিসেবে নিন্দা করেন এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের প্রতি ওইসব দেশের সমর্থনের দিকে ইঙ্গিত করেন।
তিনি বলেন, ‘গত দুই বছরে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যাপক চলমান গণহত্যা সংঘটিত করার সময়, ইসরায়েলি সরকার যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি দেশে সামরিক আক্রমণ শুরু করেছে এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে।’
মুখপাত্র লাতিন আমেরিকায়ও ওয়াশিংটনের নীতির নিন্দা করেন। তিনি বলেন, ভেনেজুয়েলা, কিউবা এবং অন্যান্য জাতির বিরুদ্ধে তাদের হস্তক্ষেপ এবং হুমকি আন্তর্জাতিক আইন ও শান্তি লঙ্ঘন করে।
বাঘাই জোর দিয়ে বলেন, ইরান সর্বদা শান্তি, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা এবং জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এক অবিচল সমর্থক এবং দশকের পর দশক ধরে পক্ষপাত ও অন্যায্য আচরণ সত্ত্বেও জাতিসংঘের একজন দায়িত্বশীল সদস্য হিসেবে কাজ করে চলেছে।
বহুপাক্ষিকতার প্রতি ইরানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা কখনই জাতিসংঘকে একটি অকার্যকর সংস্থা হিসেবে বিবেচনা করিনি, এমনকি এর প্রতিষ্ঠানগুলোকেও হুমকিও দেইনি। আসুন আমরা এমন একটি জাতিসংঘ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেই, যা বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য যুদ্ধের ভয়াবহতা রোধ করতে পারে।’