
ঘাসের ওপর ঝরে থাকা শিউলির পাপড়িতে জমে থাকা শিশির জানান দেয়—শরৎ এসে গেছে, দূরে নেই দুর্গাপূজা। হালকা কুয়াশা, শিউলির গন্ধ আর বাতাসের নিঃশব্দ দোলাচল মিলেমিশে তৈরি করে এক অদ্ভুত আবহ। আর এমন সময়েই মনে পড়ে যায় ‘অক্টোবর’-এর কথা। ২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল সুজিত সরকার পরিচালিত হিন্দি সিনেমা ‘অক্টোবর’ যা ভালোবাসার প্রকাশ নয়, নীরবতা আর উপস্থিতির আবেগ নিয়েই তৈরি ধীরলয় প্রেমকাব্য।
মুক্তির সময় বক্স অফিসে তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও বছর ঘুরে অক্টোবর এলেই ছবিটি আলোচনায় আসে। ছবির দৃশ্য আর সংলাপ নিয়ে একের পর এক পোস্ট চোখে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
সুজিত সরকার বরাবরই মূলধারার হিন্দি সিনেমার বাইরে হাঁটেন। তার ‘মাদ্রাজ ক্যাফে’, ‘ভিকি ডোনার’ কিংবা ‘পিকু’ সিনেমাগুলো দেখলেই সেটা স্পষ্ট হয়। তবে সেসব ছবিতেও কিছুটা বাণিজ্যিক ছোঁয়া ছিল। ছিল জনপ্রিয় গান, বড় তারকা কিংবা বাজারমুখী উপাদান। কিন্তু ‘অক্টোবর’-এ সেই সব অলংকার তেমন নেই।
নায়ক বরুণ ধাওয়ান—যিনি তখন ছিলেন বাণিজ্যিক সিনেমার পোস্টার বয়—এই ছবিতে ভিন্ন মাত্রার অভিনয় করেন। তার বিপরীতে নবাগত বানিতা সান্ধুর চরিত্রও দর্শকের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
‘অক্টোবর’ সিনামের গল্প ঘুরে ড্যান (বরুণ ধাওয়ান) ও শিউলি (বানিতা সান্ধু)-কে কেন্দ্র করে। দু’জন একই হোটেলে ইন্টার্ন হিসেবে কাজ করছিল। ঘটনাচক্রে একদিন তৃতীয় তলা থেকে পড়ে আহত হয় শিউলি, ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। সেখানে ড্যান অনুপস্থিত হলেও পরে জানতে পারে পড়ে যাওয়ার আগে শিউলির বলা শেষ কথা ছিল, ‘ড্যান কোথায়?’
এই বিষয়টি ড্যানকে প্রবলভাবে নাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে ড্যানের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায় হাসপাতাল। প্রতিদিন নিয়ম করে হাজির হয় সে শিউলির পাশে। ছবিটি মূলত নীরবতা, সম্পর্ক আর অপেক্ষার আবেগ নিয়ে নির্মিত যেখানে প্রেম মুখে বলা হয়নি, কেবল অনুভব করানো হয়েছিলো ।
শিউলি ফুলের মতোই ক্ষণস্থায়ী অথচ গভীর আবেগের রূপক হলো ‘অক্টোবর’ ছবির মূল সুর। পরিচালক সুজিত সরকারের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা—হাসপাতালে দীর্ঘদিন মায়ের অসুস্থতার পাশে বসে থাকার স্মৃতি—এই ছবির অনুপ্রেরণা।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় ছবিটির প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। হাসপাতালে প্রিয়জনকে হারানোর বা দীর্ঘ চিকিৎসার স্মৃতি তখন অনেককেই ‘অক্টোবর’-এর আবহ মনে করিয়ে দেয়।
বাংলা মেজাজের এই হিন্দি ছবির পেছনে ছিলেন বাঙালি নির্মাতা সুজিত সরকার, চিত্রগ্রাহক অভীক মুখোপাধ্যায় এবং সংগীত পরিচালক শান্তনু মৈত্র। তাই হয়তো আবেগের জায়গায় ছবিটি বাঙালির মনে আলাদা জায়গা করে নিয়েছে।
সুজিত সরকারের ‘অক্টোবর’-এর একমাত্র আক্ষেপ হয়তো এটুকুই—ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল এপ্রিল মাসে। অথচ এর আবহ তো শরৎ আর শিউলিকে ঘিরে যে সময়টায় ফুলের গন্ধে ভরে থাকে বাতাস। এপ্রিলের গরমে সেই আবহটুকুই যেন খানিকটা বেমানান লেগেছিল।