
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ পাওয়ার পর স্নিগ্ধা ওভারসীজ লিমিটেডের মালিক পলাতক সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একই সঙ্গে অভিযুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
পাসপোর্ট, কোভিড-১৯ টেস্ট, মেডিকেল ও পোশাক খরচের অজুহাতে ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে মামলার এজাহারে।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সিআইডি সদর দফতর থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
সিআইডির অনুসন্ধান সংশ্লিষ্টরা জানান, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানির নামে অভিযুক্তরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। সরকারি নির্ধারিত ফি ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকা হলেও প্রতিষ্ঠানটি জনপ্রতি এক লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। এর মধ্যে পাসপোর্ট, কোভিড-১৯ টেস্ট, মেডিকেল ও পোশাক খরচের অজুহাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ মেলে।
২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দুই বছরে ইউনিক ইস্টার্ন (প্রা.) লিমিটেডের মাধ্যমে তিন হাজার ৭৮৭ কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। এতে প্রায় ৪০ কোটি ৭১ লাখ টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, ‘সংঘবদ্ধ প্রতারণার অভিযোগে ইউনিক ইস্টার্ন (প্রা.) লিমিটেডের মালিক নূর আলী ফেনী-২ আসনের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) গুলশান থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলার তদন্ত করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম বিভাগ। অজ্ঞাত আরও সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে স্নিগ্ধ ওভারসীজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহা. নূর আলীসহ অভিযুক্ত ব্যবসায়ীদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দুদকের আবেদনের ভিত্তিতে গত ২৫ মে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. জাকির হোসেন নিষেধাজ্ঞা জারির এ নির্দেশ দেন।
আদালতে দেওয়া দুদকের আবেদনে বলা হয়, নিজাম হাজারী ও নূর আলীসহ অন্যরা মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি করে বিদেশে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন এবং বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুদক এ অভিযোগ অনুসন্ধান করছে।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, তারা যেকোনো সময় বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন। বিদেশে পালিয়ে গেলে তাদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা প্রয়োজন।
এ দিকে নিজাম উদ্দিন হাজারীর ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, তিনি ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন। বর্তমানে তিনি সপরিবারে বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।