
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে আছড়ে পড়ে জোড়া বিমান। আত্মঘাতী জঙ্গি হামলার এমন বীভত্স রূপ দেখে কেঁপে উঠেছিল পুরো বিশ্ব। সবার মুখে মুখে তখন একটাই নাম। তিনি ওসামা বিন লাদেন। টুইন টাওয়ারে জঙ্গি হামলায় তাকেই মাস্টারমাইন্ড মনে করা হয়।
টুইন টাওয়ারে হামলার পর আল কায়েদা নেতা লাদেনকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন মার্কিন সেনারা। তাকে খুঁজে পেতে আমেরিকা কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেছে তার হিসাব পাওয়া যায় না, তবে এই সংখ্যা বড়ই ছিল বলে ধারণা করা হয়।
জানা যায়, তখন আফগানিস্তানের একটি পাহাড়ে অবস্থান করছিলেন লাদেন। এই তথ্য জানতে পারে মার্কিন বাহিনী। সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় অভিযান। পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে সেনাবাহিনী। দীর্ঘ ১৪ বছর পর আফগানিস্তানের রুদ্ধশ্বাস সেই অভিযানের কথা ফাঁস করলেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা জন কিরিয়াকু। ভারতের সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে লাদেনের বিরুদ্ধে অভিযানের কথা জানিয়েছেন তিনি।
কিরিয়াকু ১৫ বছর ধরে আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তানে সিআইএ-এর সন্ত্রাসদমন শাখার প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার দাবি, মার্কিন বাহিনীর ভিতরে লাদেনের এক সহকারী ঢুকে পড়েছিলেন। ছিলেন আল কায়েদার সক্রিয় সদস্য। তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই সেবার মার্কিন বাহিনীর অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল, বলেন কিরিয়াকুর।
কিরিয়াকুর দাবি, সেন্ট্রাল কমান্ডের অনুবাদক হিসেবে যিনি ছিলেন, তিনিই আল কায়েদার হয়ে কাজ করছিলেন। তাকে বিশ্বাস করে মার্কিন সেনাকে ঠকতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা তো নিশ্চিত ছিলাম যে, লাদেনকে ধরে ফেলেছি। লাদেনকে বলা হয়েছিল, পাহাড় থেকে চুপচাপ নেমে আসতে। কিন্তু অনুবাদকের মাধ্যমে লাদেন ভোর পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে বলেন। নারীদের এবং শিশুদের নিরাপদে বের করে দিয়ে তিনি আত্মসমর্পণ করবেন বলে জানান। আমাদের জেনারেল ফ্র্যাঙ্ক্সকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রাজি করাতে সক্ষম হন অনুবাদক। রাতে নারী ও শিশুদের বেরিয়ে যেতে দেওয়া হয়। কিন্তু ভোরে টোরা বোরার পাহাড়ি গুহায় পৌঁছে আমেরিকার সেনাবাহিনী দেখে, সেখানে আর কেউ নেই। সবাই পালিয়ে গেছে।
কিরিয়াকুর দাবি, রাতের অন্ধকারে নারীর ছদ্মবেশে একটি ট্রাকের পিছনে চেপে আফগানিস্তান ছেড়েছিলেন লাদেন। অনুবাদকের বিশ্বাসঘাতকতার কথা যতক্ষণে জানা যায়, ততক্ষণে সীমান্ত পেরিয়ে জঙ্গিরা পাকিস্তানে প্রবেশ করে। আর তাদের নাগাল পাওয়া যায়নি। ২০১১ সালের ২ মে অবশ্য আর কোনো ভুল করেনি আমেরিকান সেনা। পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার অ্যাবটাবাদের একটি বাড়িতে ঢুকে লাদেনকে হত্যা করে। কিন্তু তার জন্য পুরো ১০ বছর অপেক্ষা করত হয়। দীর্ঘ অপেক্ষা। তারপরে মেলে সাফল্য।