
নাইজেরিয়ার লেখক-নাট্যকার ও ১৯৮৬ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ওলে সোয়িঙ্কার ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) লাগোসের কঙ্গি’স হার্ভেস্ট গ্যালারিতে বক্তৃতা দিতে গিয়ে সোয়িংকা একটি নোটিশ পড়ে শোনান, যা স্থানীয় মার্কিন কনস্যুলেট থেকে পাঠানো হয়েছিল।
নোটিশে বলা হয়েছিল, তার পাসপোর্ট নিয়ে কনস্যুলেটে উপস্থিত হতে হবে যাতে ভিসা বাতিল করা যায়।
সোয়িংকা এটিকে হাস্যরসের সঙ্গে ‘একটি অদ্ভুত প্রেমপত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি দর্শকদের সঙ্গে রসিকতা করে বলেন, ‘আমি এত ব্যস্ত যে আমার পাসপোর্ট কনস্যুলেটে পাঠানোর সময় নেই। কেউ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যেতে চায় কি?’
সোয়িংকার ভিসা মূলত গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে জারি করা হয়েছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর, তার অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ায় ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন ভিসা ও গ্রিন কার্ড বাতিলের মাধ্যমে তাদের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য হুমকি বলে মনে করা ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে আনছে।
সোয়িংকা লাইনে বলেছেন, ভিসা বাতিল হওয়ায় তিনি মার্কিন সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না। তবে তিনি বলেন, ‘আমি কনস্যুলেট এবং স্থানীয় আমেরিকানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন নই; তারা সবসময় বিনয়ী আচরণ করেছেন।’
সোয়িংকা দীর্ঘদিন ধরে সাহিত্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি সাংবাদিকতা, কবিতা, নাটক ও উপন্যাসে সমৃদ্ধ। তার গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে ‘সিজন অফ অ্যানোমি’ এবং ‘ক্রোনিকলস ফ্রম দ্য ল্যান্ড অফ দ্য হ্যাপিয়েস্ট পিপল অন আর্থ’। তিনি সেন্সরশিপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে বারবার কথা বলেছেন।
সোয়িংকা নাইজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে স্বচ্ছন্দ। ২০১৭ সালে তিনি ট্রাম্পের প্রথম নির্বাচনের প্রতিবাদে তার মার্কিন গ্রিন কার্ড বাতিল করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘যতক্ষণ ট্রাম্প ক্ষমতায় আছেন, আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চাইলে নিজে ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়াব।’
সোয়িংকার এই অভিজ্ঞতা একক নয়। ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় অন্যান্য নোবেল বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বও ভিসা বাতিলের শিকার হয়েছেন। ১৯৮৭ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী কোস্টারিকার সাবেক রাষ্ট্রপতি অস্কার আরিয়াসও এপ্রিল মাসে ভিসা বাতিলের শিকার হয়েছেন। একইভাবে, কলম্বিয়ার রাষ্ট্রপতি গুস্তাভো পেত্রো ও পানামার রাষ্ট্রপতিও এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর দাবি করেছে, তাদের উদ্দেশ্য জাতীয় নিরাপত্তা এবং অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ। তবে সমালোচকরা মনে করেন, এটি ভিন্নমত পোষণকারীদের দমন করার একটি পদ্ধতি হতে পারে। সোয়িংকা বিষয়টিকে রসিকতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন।
সোয়িংকা বলেন, ‘একটি ভিসা, দশটি বা এক হাজার ভিসা বাতিল করা কোনও বিচক্ষণ নেতার জাতীয় স্বার্থকে প্রভাবিত করতে পারবে না।’ এই মন্তব্যে তিনি মার্কিন সরকারের নীতির প্রতি সূক্ষ্ম সমালোচনা করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করেছেন, যাতে তারা মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের মূল্য বোঝে।
নোবেল বিজয়ী লেখকের এই অনন্য রসিকতা এবং স্থিতিস্থাপক দৃষ্টিভঙ্গি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। সোয়িংকা প্রমাণ করেছেন, সৃজনশীলতা ও বুদ্ধিমত্তা রাজনৈতিক বাধা ও প্রশাসনিক প্রতিবন্ধকতাকে হাস্যরসের মাধ্যমে মোকাবিলা করতে পারা যায়।