
শীত মৌসুমের সবজির মধ্যে ভোক্তাদের পছন্দের প্রথমদিকে রয়েছে নতুন আলু। মাছ বা মাংস যে কোনো রান্নাতেই নতুন আলু হলে যেন আর কথাই নেই। তবে দামটা একটু বেশি। যদিও নভেম্বর যখন রাজধানীর বাজারে নতুন আলু ওঠে, তখন প্রতি কেজির দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। যা এখন ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে নেমে এসেছে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, ডিসেম্বরের শেষদিকে বাজারে নতুন আলুর সরবরাহ বাড়লে দাম আরও কমবে। কারণ, পুরোনো আলুর মজুত এখনো শেষ হয়নি। যা বাজারে একধরনের চাপ সৃষ্টি করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাওরান বাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শীত মৌসুমের বিভিন্ন সবজির সঙ্গে নানা জাতের নতুন আলু উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে ডায়মন্ড আলু, আকারে ছোট লাল আলু, হাইব্রিড রুমানা আলু ও জাম আলু। এছাড়া, পুরোনো আলুর মধ্যে রয়েছে আকারে বড় লম্বাটে রংপুরের কাঠিয়াল আলু। কাওরান বাজারের আলু ব্যবসায়ী আকরাম বলেন, বাজারে নতুন যে ডায়মন্ড আলু উঠেছে। এটা মুন্সীগঞ্জের। সারা বছরই এই আলুর বেশ চাহিদা থাকে। কোল্ডস্টোরেজে সাধারণত এই আলু রাখা হয়। তিনি বলেন, আকারে মাঝারি থেকে ছোট যে লাল আলু, এগুলো বগুড়ার আলু নামে পরিচিত। এর বেশ চাহিদা। আর খয়েরি রঙের লম্বাটে একধরনের আলু আছে, যেটাকে জাম আলু বলা হয়। রংপুর, বগুড়ার দিকে বেশি হয়। এই আলু অনেকেই ভর্তার জন্য নিয়ে থাকেন। ভর্তা করলে বেশ আঠালো হয়। এই বাজারেরই আরেক আলু ব্যবসায়ী কবির বলেন, এবার আলুর দাম তুলনামূলক কম। নতুন প্রায় সব ধরনের আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে বাজারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। শুধু জাম আলুটার দাম একটু বেশি। ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, নতুন আলু ওঠায় বাজারে পুরোনো আলুর চাহিদা আরো কমে গেছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ টাকায়। একসঙ্গে পাঁচ কেজি (এক পাল্লা) কিনলে দাম আরো কিছুটা কম রাখা হয় বলে তিনি জানান।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বছরে আলুর চাহিদা প্রায় ৯০ লাখ টন। গত অর্থবছরে মোট ১ কোটি ২৯ লাখ টন আলু উত্পাদিত হয়। আর ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আলু উত্পাদিত হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ টন। এ হিসাবে গত বছর তার আগের বছরের তুলনায় আলুর উত্পাদন বেড়েছে। রাজধানীর অন্যতম বড় পাইকারি ও খুচরাবাজার কাওরান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নতুন আলুর বেশ সরবরাহ। আগামী তিন থেকে চার মাস নতুন আলু বাজারে পাওয়া যাবে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আলু পচনশীল পণ্য। তাই এরপর আলু সংরক্ষণের জন্য হিমাগারে রাখতে হবে। সাধারণত ফেব্রুয়ারি থেকেই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা শুরু হয়। হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুই পরে সারা বছর ধরে বিক্রি করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এবার পুরোনো মজুতকৃত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, পুরোনো অনেক আলু এখনো বিক্রি হয়নি। নতুন আলু ওঠায় পুরোনো আলুর দাম হিমাগার পর্যায়ে আরেক দফা কমে গেছে। ফলে হিমাগারে আলু রেখে বড় ধরনের লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, নতুন আলু ওঠার পর গত প্রায় এক মাসে হিমাগার পর্যায়ে পুরোনো আলুর দাম কেজিতে আট টাকা কমে গেছে। সরকার হিমাগার পর্যায়ে আলুর কেজি ২২ টাকা নির্ধারণ কলে দিলেও এ দরে কেউ আলু কিনছে না। কারণ, খুচরা বাজারেই এখন পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ টাকায়। এদিকে বাজারে আলুর প্রচুর সরবরাহ বাড়ায় গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এবার কম দামে আলু বিক্রি হচ্ছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত বছর এই সময় রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৬৫ থেকে ৮০ টাকায়, যা এখন ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।