
প্রতিদিন কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ঢাকার আকাশ। রাজধানীর সড়কে পুরোনো, ফিটনেসবিহীন ও ধোঁয়া উগরে দেওয়া হাজারো গাড়ি বায়ুদূষণের অন্যতম বড় উৎস হয়ে উঠেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ঢাকার মোট বায়ুদূষণের অন্তত ১৫ শতাংশের জন্য দায়ী এসব লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। চিকিৎসকদের মতে, এতে নগরবাসীর মধ্যে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ফুসফুসের ক্যানসারের মতো মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
আইন অনুযায়ী ২০ বছরের বেশি পুরোনো বাস-মিনিবাস ও ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক-কাভার্ডভ্যান সড়কে চালানো যায় না। কিন্তু মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রভাব ও বিআরটিএর অনিয়মের কারণে এসব গাড়ি নির্দ্বিধায় চলছে। সরকারি হিসাবেই দেখা গেছে, বর্তমানে দেশে ২৫ বছরের বেশি পুরোনো ট্রাক-কাভার্ডভ্যানের সংখ্যা ৪১ হাজারের বেশি এবং বাস-মিনিবাসের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। এর মধ্যে বহু গাড়িরই ফিটনেস নেই।
গত জুলাইয়ে সরকার ফিটনেসবিহীন গাড়ি উচ্ছেদে অভিযান শুরু করলেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো ধর্মঘটের হুমকি দিলে অভিযান স্থগিত হয়। উল্টো সরকার মালিকদের দাবির মুখে নতুন সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে রিকন্ডিশন্ড বাস ও ট্রাক আমদানির বয়সসীমা পাঁচ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে। পাশাপাশি পুরোনো গাড়ি মালিকদের স্বল্পসুদে ঋণ ও কর-সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে নীতি শিথিল করলে পুরোনো গাড়ির দৌরাত্ম্য আরও বাড়বে। পরিবহন বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকার যদি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিকে অগ্রাধিকার না দিয়ে কেবল মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় নীতি গ্রহণ করে, তবে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে না। তাদের মতে, পুরোনো গাড়ি বাজার থেকে তুলে না নিলে সড়কের নৈরাজ্যও কোনোভাবেই কমবে না।
পরিবেশবিদরা আরও বলছেন, পরিবহন খাতে সুশাসন না থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠছে। সরকারের প্রতিটি উদ্যোগ বিআরটিএর ভেতরের দুর্নীতি ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের চাপের কারণে ভেস্তে যাচ্ছে। ফলে নাগরিকরা প্রতিদিন কালো ধোঁয়া গিলে রোগে ভুগছেন, অথচ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, ‘ঢাকার বায়ুদূষণের সবচেয়ে বড় দায়ী যানবাহনের কালো ধোঁয়া। কিন্তু সরকার চাইলে এখনই ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানো বন্ধ করতে পারে। এখানে সমস্যা ইচ্ছাশক্তির অভাব এবং স্বার্থের রাজনীতিতে আটকে যাওয়া।’