
ময়মনসিংহ জেলার মাছ চাষ এখন কেবল কৃষি নয়, অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জেলায় প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মৎস্য চাষি জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। জেলায় পুকুর ও খামারের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ, যার মধ্যে এক লাখের বেশি বাণিজ্যিক উৎপাদনে ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে মোট উৎপাদনের ১২ শতাংশ মাছ সরবরাহ করে এই জেলা। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে মাছ সারাদেশে সরবারহ করে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ময়মনসিংহ জেলায় মোট মাছ উৎপাদন হয়েছিল তিন লাখ ৪৫ হাজার টন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১৮ হাজার ৬৪৫ টনে। বাজারমূল্য হিসাব করলে দাঁড়ায় প্রায় ১২ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, মাছ উৎপাদনে ভালুকা উপজেলা প্রথম স্থানে। ত্রিশাল দ্বিতীয় এবং মুক্তাগাছা তৃতীয়। এছাড়া সদর, তারাকান্দা, নান্দাইল, ফুলবাড়িয়া, ঈশ্বরগঞ্জ, ফুলপুর, গফরগাঁও, গৌরীপুর, ধোবাউড়া ও হালুয়াঘাটেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাছ চাষ হচ্ছে।
যদিও উৎপাদন বাড়ছে, তবুও মৎস্য চাষিদের দুশ্চিন্তাও কমেনি। খাদ্য, বিদ্যুৎ ও ঋণের উচ্চমূল্য, আকস্মিক বন্যা ও রোগবালাইয়ের কারণে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এছাড়া বাজার ব্যবস্থাপনা দুর্বল ও সংরক্ষণের সমস্যা রয়েছে। এ কারণে চাষিরা প্রাপ্ত দাম ন্যায্য পান না।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মশিউর রহমান বলেন, মৎস্য খাবার তৈরির জন্য যেসব উপাদান বিদেশ থেকে আনতে হয়, সেগুলো অনেক দামি। এগুলো দেশে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। আর মাছের উৎপাদন বাড়াতে হলে আমাদের দেশের প্রতিটি জলাশয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা দরকার।
ময়মনসিংহ বিভাগীয় মৎস্য অফিসের পরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, ময়মনসিংহের এই সফলতার পেছনে রয়েছে বিশাল জলসম্পদ আর চাষিদের একাগ্রতা। এখানকার প্রকৃতি ও ভৌগোলিক অবস্থান মৎস্য চাষের জন্য অত্যন্ত অনুকূল। আমাদের মূল লক্ষ্য, একটি টেকসই বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা। আমরা সরাসরি চাষি থেকে ভোক্তার কাছে মাছ পৌঁছানোর জন্য কার্যকর সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা করছি। এর ফলে চাষিরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাবেন। সেই সঙ্গে আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে মাছ রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য কাজ করব।