
বলিউডের ইতিহাসে এমন অনেক অভিনেত্রী আছেন যারা রাতারাতি আলোচনায় এসেছেন আবার হঠাৎই হারিয়েও গেছেন। আশির দশকের আলোচিত ও সাহসী অভিনেত্রী কিমি কাতকার তাদেরই একজন। খুব অল্প সময়ের ক্যারিয়ারে তিনি যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, তেমনি নানা বিতর্কেও ছিলেন ঘেরা।
আশির দশকটি ছিল বলিউডে সৃজনশীলতার যুগ। তখনই মুম্বাইয়ের মেয়ে কিমি কাতকার মডেলিং দিয়ে শুরু করে চলচ্চিত্রে পা রাখেন। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া অ্যাডভেঞ্চার অব টারজান তাকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি এনে দেয়। হেমন্ত বীরজের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনীত এ ছবিতে তার উপস্থিতি, নাচ আর পর্দার আত্মবিশ্বাস দর্শকদের মুগ্ধ করে। ছবিটির একটি নগ্ন দৃশ্য তাকে বিতর্কের কেন্দ্রে নিয়ে আসে। সেই সময়ের আলোচনায় কিমি নিজেই বলেছিলেন, ‘তখন আমি বুঝিনি, দৃশ্যটি এতটা বিতর্কিত হবে। কিন্তু আমার কাছে অভিনয় মানে ছিল সাহসের পরীক্ষা।’
এরপর কিমি একের পর এক ছবিতে কাজ করেন। অমিতাভ বচ্চন, অনিল কাপুর, গোবিন্দ, আদিত্য পঞ্চোলির মতো তারকাদের সঙ্গে তার পর্দার রসায়ন দর্শকের মন জয় করে নেয়। পর্দায় তার নাচ, অভিব্যক্তি আর গ্ল্যামার তাকে বলিউডের নতুন সেনসেশনে পরিণত করে।
১৯৯১ সালে অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে হাম ছবিতে অভিনয় করেন কিমি। ছবির জনপ্রিয় গান জুম্মা চুম্মা দে দে আজও দর্শকের মনে গেঁথে আছে। উজ্জ্বল লাল পোশাকে তার প্রাণবন্ত নাচের দৃশ্য বলিউড ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। এক সাক্ষাৎকারে কিমি বলেছিলেন, ‘গানটি ছিল একেবারে আলাদা। সেটের আলো, বিট, আর অমিতাভজি—সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ।’
কিমি কাতকারের আরেকটি আলোচিত কাজ কালা বাজার (১৯৮৯)। ছবিটিতে তার দুই মিনিটের টপলেস দৃশ্য মুক্তির পর তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। কেউ সাহসিকতার প্রশংসা করেন, কেউ আবার তীব্র সমালোচনা করেন। কিন্তু বিতর্ক যত বেড়েছে, কিমির জনপ্রিয়তাও ততই উঁচুতে উঠেছে।
ক্যারিয়ারের শীর্ষ সময়ে, ১৯৯২ সালে কিমি কাতকার হঠাৎ অভিনয়জগৎ থেকে সরে দাঁড়ান। কারণ—ব্যক্তিগত জীবনকে অগ্রাধিকার দেওয়া। তিনি ফটোগ্রাফার ও বিজ্ঞাপন নির্মাতা শান্তনু শিওরেকে বিয়ে করেন এবং পরিবারকেই বেছে নেন। কিছু সময় অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে থাকার পর এখন স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে গোয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
২০০৯ সালের এক সাক্ষাৎকারে কিমি বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, সঠিক সময়েই ইন্ডাস্ট্রি ছেড়েছি। অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে কাজ করার পর আমার করার মতো আর কিছু বাকি ছিল না। আমার জীবনের এই অধ্যায় এখানেই সম্পূর্ণ।’
পর্দা থেকে সরে গেলেও কিমি কাতকার আজও ‘টারজান গার্ল’ হিসেবে পরিচিত। আলো, বিতর্ক আর সাহসিকতার মিশেলে তিনি বলিউডে রেখে গেছেন এক উজ্জ্বল অধ্যায়।