
কারও দানবে পরিণত হওয়া ঠেকাতেই প্রতিষেধক হিসেবে উচ্চকক্ষের প্রস্তাব করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ‘প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষ কি জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারবে’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পৃষ্ঠপোষকতায় সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এই সংলাপের আয়োজন করেছে।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনার কথা যদি ধরি, তিনি কিন্তু ট্যাংকে করে আসেন নাই, উর্দি পরেও আসেন নাই। এসে (ক্ষমতায়) সংবিধানও বাতিল করে দেননি। তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে এসেছিলেন, যদিও নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু কীভাবে শেখ হাসিনা কীভাবে স্বৈরাচার, দানবে পরিণত হয়েছিলেন? কারণ, স্বৈরাচারী ব্যবস্থাই তাকে দানবে পরিণত করেছে।
তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হলো, এই ব্যবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। অবসান না ঘটলেও কিছু চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের বিষয় আসবে।
তিনি আরও বলেন, উচ্চকক্ষের বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে একমত না হলেও বাস্তবতার নিরিখে তিনি একমত হয়েছেন এবং চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স নিশ্চিত করতে এটি সুপারিশ করা হয়েছে। জবাবদিহিতা না থাকার কারণেই শেখ হসিনা দানবে পরিণত হয়েছিল।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই সদস্য আরও বলেন, উচ্চকক্ষ থাকলে শেখ হাসিনার পক্ষে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনী সম্ভব হতো না। এই সংশোধনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনা দানব হয়ে উঠেছিল। সংবিধান সংশোধনীর ক্ষেত্রে কোনো একক দল যাতে আর একক সিদ্ধান্ত নিতে না পারে জন্য উচ্চকক্ষ করা। ফলে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকলে ক্ষমতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
ড. বদিউল আলম বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতায় অসামাঞ্জস্যতার কারণে শেখ হাসিনা দানব হয়েছিল। এটি আমরা ২০০১ ও ২০০৮ সালে দেখেছিলাম। ২০০১ সালে বিএনপি ৪০ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৪০ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট। সেইবার বিএনপি ১৯৩টি আসন পায়, আওয়ামী লীগ পায় ৬২টি আসন। ২০০৮ সালে নৌকায় ভোট পড়ে ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ, আসন পায় ২৩০টি। ধানের শীষে ভোট পড়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ, তারা মাত্র ৩০টি আসন পায়। এই যে অসামাঞ্জস্যতা এটি বড় দুর্বলতা। বিএনপিও তখন (২০০১-২০০৬) অনেক কিছু করেছিল বলে এক-এগারো আসে। এসব ঠেকাতেই উচ্চক্ষের প্রস্তাব, যা চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স তৈরি করবে।