
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) কারণে মানুষের কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে এমন কিছু দক্ষতা অর্জন করা জরুরি, যা মেশিনের পক্ষে সহজে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। প্রথম আলো ডেস্কের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এমন দশটি মানবিক দক্ষতা নিচে আলোচনা করা হলো, যা মানুষকে মেশিনের চেয়ে এগিয়ে রাখবে।
১. আবেগীয় বুদ্ধিমত্তা (ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা ইকিউ)
মানুষের অনুভূতি বোঝা, অন্যের আবেগকে সম্মান জানানো এবং নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হলো আবেগীয় বুদ্ধিমত্তার মূল ভিত্তি। এই দক্ষতা সম্পর্ক স্থাপন, পরিচালনা এবং নেতৃত্ব প্রদানের জন্য অপরিহার্য। এটি মানুষকে অন্যদের সঙ্গে গভীর সংযোগ স্থাপন করতে সহায়তা করে, যা এআই অনুকরণ করতে পারে না।
২. সমালোচনামূলক ও বিচারিক চিন্তাভাবনা
গভীরভাবে চিন্তা করে জটিল সমস্যার সমাধান করা এবং স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের একটি বিশেষ দক্ষতা। এটি নতুনত্ব ও সৃজনশীলতার পথ খুলে দেয়। এআই শুধুমাত্র প্রোগ্রাম করা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কাজ করতে পারে, কিন্তু স্বতন্ত্রভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা তার নেই।
৩. সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবন
নতুন ধারণা তৈরি করা এবং শিল্প, সাহিত্য বা বিজ্ঞানে নতুনত্ব আনা মানুষের একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। এআই বিদ্যমান তথ্য ব্যবহার করে কিছু তৈরি করতে পারলেও, তা মানুষের মতো মৌলিক সৃজনশীলতা নয়। এটি কেবল তথ্যের পুনরাবৃত্তি বা সমন্বয় মাত্র।
৪. নৈতিক বিশ্লেষণ ও মূল্যবোধ
মানুষ নৈতিকতা, সহমর্মিতা এবং মানবিক বিবেচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়। এআই অ্যালগরিদম চালাতে পারলেও, এটি মানুষের মতো নিজস্ব নৈতিক মানদণ্ড তৈরি করতে পারে না। মানবিক মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মানুষকে এআই থেকে আলাদা করে।
৫. অভিযোজন ক্ষমতা ও দৃঢ়তা
পরিবর্তিত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং নতুন বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের একটি বড় শক্তি। সংকটের মুহূর্তে টিকে থাকার মানসিক দৃঢ়তা মানুষকে অন্যদের থেকে আলাদা করে।
৬. সাংস্কৃতিক বুদ্ধিমত্তা ও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি
বিভিন্ন সংস্কৃতিকে বোঝা, সম্মান করা এবং আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে কাজ করার ক্ষমতা মানুষকে এগিয়ে রাখে। এটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও সম্পর্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যা মেশিনের পক্ষে বোঝা বা অনুকরণ করা সম্ভব নয়।
৭. আত্মপর্যালোচনা ও আবেগ নিয়ন্ত্রণ
নিজেকে জানার চেষ্টা, নিজের ভুল থেকে শেখা এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখার ক্ষমতা ব্যক্তিগত উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার মূল চাবিকাঠি। এটি মানুষকে মানসিক চাপ মোকাবেলা করতে এবং আরও ভালোভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৮. আত্মরক্ষার কৌশল
শারীরিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি আত্মরক্ষার কৌশল আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। একটি সুস্থ শরীর মানসিক দৃঢ়তারও উৎস। এই শারীরিক এবং মানসিক দক্ষতা এআই অর্জন করতে পারে না।
৯. আর্থিক ব্যবস্থাপনা
অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং মানবিক বিবেচনার মাধ্যমে অর্থ পরিচালনা করা মানুষের একটি বিশেষ দক্ষতা। এটি দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
১০. কৌতূহল, অভ্যাস গঠন ও সামাজিক দক্ষতা
কৌতূহল নতুন কিছু শেখার আগ্রহ তৈরি করে, ভালো অভ্যাস সাফল্যের ভিত্তি গড়ে তোলে এবং সামাজিক দক্ষতা সম্পর্ক উন্নত করে। এগুলি এমন মানবিক গুণাবলী যা মেশিন অনুকরণ করতে অক্ষম।