
থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা এখনও রাজকীয় ক্ষমার জন্য আবেদন করার যোগ্য, কারণ তার পক্ষ থেকে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা পড়েনি। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও আইনবিষয়ক মন্ত্রী বোরওর্নসাক উওয়ান্নো এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন।
বোরওর্নসাক বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ২৫৯ ধারা অনুযায়ী, দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেক বন্দীরই রাজকীয় ক্ষমা প্রার্থনার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার কেবল তখনই সীমিত হয় যখন পূর্বের কোনো আবেদন খারিজ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ২৬৪ ধারা অনুসারে দুই বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নতুন আবেদন করা যায় না। তিনি নিশ্চিত করেন, থাকসিনের পক্ষ থেকে এখনও কোনো আবেদন খারিজ হয়নি, ফলে তিনি এখনও আবেদন করার সম্পূর্ণ যোগ্যতা বহন করছেন।
বোরওর্নসাক বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করেন, রাজকীয় ক্ষমা চাওয়ার প্রক্রিয়ায় বিচার মন্ত্রী (পুলিশ লেফটেন্যান্ট জেনারেল রুত্থাপন নাওওয়ারাত) বন্দীর পক্ষ থেকে আবেদনটি মন্ত্রিসভার সচিবালয়ের মাধ্যমে রাজকীয় হাউসহোল্ড ব্যুরোতে পাঠান। এরপর প্রিভি কাউন্সিল মতামত প্রদান করে এবং অবশেষে সংবিধানের ১৭৯ ধারা অনুসারে বিষয়টি রাজাকে উপস্থাপন করা হয়, যেখানে রাজকীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
তিনি জানান, থাইল্যান্ডে দুই ধরনের ক্ষমা রয়েছে—একটি হলো ব্যক্তিগত রাজকীয় ক্ষমা, আরেকটি বিশেষ উপলক্ষকে কেন্দ্র করে ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা। তবে উভয়ই সম্পূর্ণ রাজকীয় বিশেষাধিকারভুক্ত, এবং সরকারের কোনো শাখারই তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই।
থাকসিনের মামলায় কোনো প্রশাসনিক জটিলতা বা আইনি বাধা দেখা দিতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নে বোরওর্নসাক বলেন, ‘রাজকীয় ক্ষমা চাওয়া প্রতিটি বন্দীর সাংবিধানিক অধিকার।’ একমাত্র ব্যতিক্রম হলো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের ক্ষেত্রে, যাদের কেবল একবারই আবেদন করার অনুমতি রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট এক রাজকীয় আদেশে থাকসিনের মোট কারাদণ্ড কমিয়ে এক বছরে আনা হয়েছিল।
সম্প্রতি, ২০২৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থাইল্যান্ডের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, থাকসিনের ছয় মাস ধরে বিলাসবহুল হাসপাতালে থাকা তার সাজার শর্ত পূরণ হিসেবে গণ্য হবে না। ফলে আদালত তাকে দুই বছর আগে ঘোষিত এক বছরের কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশ দেয়। আদালত আরও জানায়, ২০২৩ সালের আগস্টে থাইল্যান্ডে ফেরার পর থেকে ২০২৪ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত পুলিশ জেনারেল হাসপাতালে থাকার কারণ হিসেবে দেখানো অসুস্থতার দাবিটি গ্রহণযোগ্য নয়।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ব্যাংককের ক্লং প্রেম কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকসিনের সাবেক স্ত্রী খুনয়িং পটজামন দামাপং তার আইনজীবী উইন্যাত চার্টমন্ট্রিকে সঙ্গে নিয়ে তাকে সাক্ষাৎ করেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের পটজামন সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, থাকসিনকে ‘ভালো দেখাচ্ছে, যদিও সামান্য অসুস্থ।’
অন্যদিকে, আইনজীবী উইন্যাত মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান যে, বিচার মন্ত্রী থাকসিনের পক্ষে দ্বিতীয় কোনো আবেদন ফরওয়ার্ড করেছেন কিনা, উল্লেখ করেন যে বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে রাজকীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল।
সূত্র: ব্যাংকক পোস্ট