
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের (এইচএসআইএ) নবনির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্বে জাপানি কনসোর্টিয়াম রাজি না হলে সরকার বিকল্প আন্তর্জাতিক অপারেটরের খোঁজ করবে বলে জানিয়েছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন উপদেষ্টা এস কে বশির।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘জাপানি কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে আমাদের আলোচনার প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছি। যেসব বিষয়ে অস্পষ্টতা ছিল, সব পরিষ্কার করেছি। আশা করছি এ সপ্তাহের মধ্যেই তাদের উত্তর পাবো। এখন সিদ্ধান্ত তাদের হাতে। তবে সুমিতোমো না মানলে আমরা অবশ্যই অন্য অপারেটরের দিকে যাবো। সেটা জাপান হোক বা অন্য কোনো দেশ—আমরা কাজ করি বাংলাদেশের জন্য।’
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত অন্য কোনো দেশের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। তবে আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি) লেনদেন উপদেষ্টা হিসেবে যে কাঠামো দিয়েছে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই স্বচ্ছ জবাব দিয়েছে।
আগামী ৭ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর সিভিল এভিয়েশন অথরিটির (সিএএবি) প্রধান কার্যালয়ে তিন দিনের চূড়ান্ত আলোচনা হবে। প্রথম দুই দিন সিএএবি চেয়ারম্যান এবং শেষ দিন উপদেষ্টা এস কে বশির বৈঠক পরিচালনা করবেন।
প্রায় ২১ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে নির্মিত তৃতীয় টার্মিনাল ইতোমধ্যেই চালুর জন্য প্রস্তুত। গত আগস্টে বিমানের একটি ফ্লাইট পরীক্ষামূলকভাবে টার্মিনাল ব্যবহার করেছে। তবে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু আটকে আছে অপারেটর নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে।
জাপানি কনসোর্টিয়ামের নেতৃত্বে রয়েছে সুমিতোমো করপোরেশন এবং এতে জাপান এয়ারপোর্ট টার্মিনাল কোম্পানি, নারিতা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট করপোরেশন, সোজিতজ করপোরেশন ও জাপান সরকারের সংস্থাগুলো যুক্ত- মূলত একটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) মডেলে পরিচালনার প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল। এ প্রতিশ্রুতি দেয় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার।
তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর নীতি পরিবর্তন করে প্রথম দুই বছরের জন্য গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব বিমানের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্তে কনসোর্টিয়ামের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। তারা কেবল গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং নয়, বরং বিস্তৃত পরিচালনা ও আয়ের অংশীদারিত্ব চাইছে। রাজস্ব ভাগাভাগি নিয়েই মূলত আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএএবি সূত্র।
তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে ৮ মিলিয়ন থেকে বেড়ে ২৪ মিলিয়নে উন্নীত হবে। একই সঙ্গে কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতাও বাড়বে। ঢাকা মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও হজ ক্যাম্পের সঙ্গে সংযুক্ত এই টার্মিনাল দেশের ভবিষ্যৎ বিমান পরিবহন খাতে কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, অপারেটর নিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে, কারণ স্থাপিত যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে যাবে এবং প্রকল্পের কৌশলগত সুফলও ব্যাহত হতে পারে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৪২ হাজার বর্গমিটার এলাকায় নির্মিত হয়েছে অত্যাধুনিক টার্মিনাল ভবন। এখানে রয়েছে ২৬টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার, ৬৬টি ডিপারচার ইমিগ্রেশন ডেস্ক, ৫৯টি অ্যারাইভাল ইমিগ্রেশন ডেস্ক ও তিনটি ভিআইপি ইমিগ্রেশন ডেস্ক।