
পাকিস্তানের বিমান হামলায় আফগানিস্তানের কান্দাহারে কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হওয়ার ঘটনার মধ্যেই কাতারের দোহায় আলোচনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে একমত হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, এই ঐকমত্য হয়েছে শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) পারস্পরিকভিত্তিতে, কিন্তু একই দিন সন্ধ্যায় পাকিস্তানের চালানো হামলায় দুই দেশের উত্তেজনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, শুক্রবার দিবাগত রাতে চালানো এসব হামলায় তিনজন ক্রিকেটারসহ কমপক্ষে ৮ জন নিহত হয়েছেন। আফগানিস্তান এই হামলাকে কাপুরুষোচিত বলে নিন্দা জানিয়েছে এবং আফগান জাতীয় ক্রিকেট দলের সুপরিচিত ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী একে শোকাবহ ট্রাজেডি বলে অভিহিত করেছেন। এই হামলার ঘটনা দোহা আলোচনাকে প্রভাবিত করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানোর এই ঐকমত্য হয়েছে আফগানিস্তানের অনুরোধে। এর ফলে কয়েক দিনের তীব্র লড়াই বন্ধ হয়, ততক্ষণে কয়েক ডজন মানুষ নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শফকাত আলি খান বলেন, ‘পাকিস্তান ও আফগানিস্তান চলমান সীমান্ত উত্তেজনার শান্তিপূর্ণ সমাধান অর্জনের লক্ষ্যে গঠনমূলক সংলাপে লিপ্ত রয়েছে।’
তিনি উল্লেখ করেন, ৪৮ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির সময় দু’পক্ষই এই জটিল সমস্যার ইতিবাচক সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য ‘আন্তরিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে’। এদিকে, রয়টার্স সূত্রে জানা গেছে যে একটি পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল ইতিমধ্যে দোহায় পৌঁছে গেছে এবং একটি আফগান প্রতিনিধিদল শনিবার কাতারের রাজধানীতে পৌঁছানোর কথা। তবে নিরাপত্তা সূত্রগুলো দোহায় পাকিস্তানি প্রতিনিধিদলের উপস্থিতি সংক্রান্ত রিপোর্টকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং জানিয়েছে যে ওই প্রতিনিধিদল শনিবার সকালেই রওনা হবে বলে নির্ধারিত।
আফগান তালেবান শাসনগোষ্ঠীর ভূখণ্ডে থেকে কার্যরত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তালেবান অনিচ্ছুক—এমন এক প্রেক্ষাপটে ইসলামাবাদ ও কাবুলে উত্তেজনা বাড়ে এবং পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার মাত্রাও বাড়ে। রিপোর্টে বলা হয়, তালেবান বাহিনী ও ভারত সমর্থিত তেহরিকে তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি), যাকে পাকিস্তান ‘ফিতনা আল-খারিজ’ নামে আখ্যায়িত করেছে, ১২ অক্টোবর পাকিস্তানের ওপর হামলা চালায়।
পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনী প্রতিশোধমূলক প্রতিকার হিসেবে পদক্ষেপ নিয়ে ২ শতাধিক আফগান তালেবান ও সংশ্লিষ্ট দুর্বৃত্তকে হত্যা করে বলে সরকারি খবরে জানানো হয়। সামরিক মিডিয়া উইং জানিয়েছে, ওই সংঘর্ষে ২৩ জন সেনা শহীদ হয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশ এবং দেশটির রাজধানী কাবুলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক হামলা পরিচালনা করেছে এবং সাম্প্রতিক আগ্রাসনের জবাবে একাধিক ঘাঁটি ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে।
যুদ্ধবিরতির পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ বলেন, পাকিস্তান যুক্তিসঙ্গত শর্তে আফগান তালেবান শাসনগোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। তিনি বলেন, এখন একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির জন্য বলটা তালেবান শাসকগোষ্ঠীর কোটে রয়েছে। অন্যদিকে, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খাজা আসিফ আফগান শাসকগোষ্ঠীর প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, পাঁচ বছরে পাকিস্তানের চেষ্টা ও ত্যাগ সত্ত্বেও ইতিবাচক জবাব দেওয়া হয়নি। তিনি মন্তব্য করেন, আফগানিস্তান এখন ভারতের একটি প্রক্সি হয়ে গেছে। এক্সে দেওয়া পোস্টে প্রতিরক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেন, ভারত, আফগানিস্তান ও ফিতনা আল-খারিজ (টিটিপি) যৌথভাবে পাকিস্তানে যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানে বসবাসরত সমস্ত আফগানকে নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে এবং যারা বৈধ পাকিস্তানি ভিসা রাখেন তারাই অবস্থান করতে পারবেন। তিনি দশকজুড়ে জোর করে দেওয়া আতিথেয়তার সমাপ্তির ওপর জোর দেন এবং বলেন, পাকিস্তানের ভূমি ও সম্পদ দেশের ২৫ কোটি নাগরিকের জন্য। প্রতিরক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেন, সন্ত্রাসের উৎস যে-ই হোক না কেন তাকে কঠোর মূল্য চুকাতে হবে এবং পাকিস্তানের শান্তিপূর্ণ প্রতিবেশী সম্পর্কের অনুরোধ পুনরায় জোর দেন তিনি।
সূত্র: রয়টার্স, এনডিটিভি