
তানজানিয়ায় বিতর্কিত নির্বাচনের পর সহিংস বিক্ষোভে শত শত মানুষ নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল চাদেমা। তবে সরকার এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
চাদেমার মুখপাত্র জন কিটোকা শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) এএফপিকে বলেন, ‘বর্তমানে দার-এস-সালামে প্রায় ৩৫০ জন এবং মওয়ানজায় ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের পরিসংখ্যান যোগ করলে মৃত্যুর সংখ্যা ৭০০ ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
দলটি জানিয়েছে, তাদের সদস্যরা হাসপাতালগুলো ঘুরে মৃতের সংখ্যা যাচাই করছে। এক নিরাপত্তা সূত্র ও একজন কূটনীতিকও এএফপিকে জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যা ‘শতাধিক’ হতে পারে।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ থাবিত কম্বো আল জাজিরাকে বলেছেন, সরকারের কাছে কোনো মৃত্যুর সরকারি তথ্য নেই এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি দাবি করেন, বরং বিক্ষোভকারীরা সরকারি সম্পত্তি ও বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য আছে যে অন্তত ১০ জন নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে। সংস্থাটি নিরাপত্তা বাহিনীকে সংযমের আহ্বান জানিয়েছে।
গত বুধবারের নির্বাচনের পর দার-এস-সালামসহ বিভিন্ন শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা নির্বাচনী কারচুপি ও বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে সড়কে নেমে আসে। তারা গাড়ি, পেট্রোল পাম্প ও পুলিশ স্টেশনে আগুন দেয়। প্রতিক্রিয়ায় সরকার রাস্তায় সেনা মোতায়েন ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। বিরোধী দল চাদেমা জানিয়েছে, নির্বাচনী সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এদিকে, নির্বাচনে ক্ষমতাসীন চামা চা মাপিনডুজি (সিসিএম) দল আবারও জয়ী হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, নির্বাচনে ‘ব্যাপক জালিয়াতি’ হয়েছে এবং মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো গত কয়েক মাস ধরে নির্বাচনের আগে বিরোধীদের ওপর দমন-পীড়ন, অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সতর্ক করেছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, দেশজুড়ে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা ও মিডিয়ার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
আধা-স্বায়ত্তশাসিত জাঞ্জিবারেও একই অভিযোগ উঠেছে। সেখানে নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট হুসেইন মউইনি ৭৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বলে কমিশন জানিয়েছে, কিন্তু বিরোধীরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে নতুন আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে।
এদিকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় সরকার আগামী সোমবার পর্যন্ত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখেছে এবং সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
সূত্র/ আল-জাজিরা