
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনের বিজয়ের প্রেক্ষিতে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতা ও সংসদ সদস্য ড. শশী থারুর সতর্ক করে বলেছেন, বাংলাদেশে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ভারত উপেক্ষা করতে পারে না।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এনডিটিভিতে প্রকাশিত একটি মতামত নিবন্ধে থারুর লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠনের জয় একটি যুগান্তকারী ঘটনা। ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম কোনো ইসলামপন্থী ছাত্র সংগঠন এই প্রভাবশালী সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ নিল।’
তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং ভবিষ্যতের একটি অশনিসংকেত, যার পরিণতি ভারতের জন্যও উদ্বেগজনক হয়ে উঠতে পারে।’
পুরনো রাজনৈতিক কাঠামোর প্রতি অবিশ্বাস
থারুরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এই নির্বাচনের ফলাফল আসলে বাংলাদেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল—আওয়ামী লীগ ও বিএনপি–র প্রতি জনগণের প্রত্যাখ্যান। তিনি লিখেছেন, “এই দুই দলকে জনগণ—ন্যায্য বা অন্যায্যভাবে—দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতার প্রতীক হিসেবে দেখছে। ফলে অনেক তরুণ হতাশাগ্রস্ত এবং বিকল্প খুঁজছে।” তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করেছেন যে, “এই ভোটের মানে কিন্তু ইসলামী দলের প্রতি ব্যাপক সমর্থন নয়, বরং এটা ছিল একটি বিকল্পের জন্য মরিয়া আর্তি।”
জামায়াতের নতুন উত্থান
থারুর মন্তব্য করেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক পুনরায় উত্থানের জন্য এখন উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ দ্বারা দমন-পীড়নের শিকার হওয়া এই দল এখন ঢাবির মতো ধারাবাহিকভাবে প্রগতিশীল ক্যাম্পাসেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম যারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করেনি, তাদের মধ্যে জামায়াত নতুন করে জায়গা করে নিচ্ছে।
বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ এবং দলটি রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত, আর বিএনপি নেতৃত্ব সংকটে নিমজ্জিত—এই প্রেক্ষাপটে জামায়াত ২০২৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার সুযোগ পাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ভারতের জন্য সম্ভাব্য ঝুঁকি
শশী থারুর সতর্ক করে বলেন, ‘জামাতের নেতৃত্বাধীন সরকার বা তাদের প্রভাবিত জোট সরকার ভারতের জন্য একটি জটিল ও সম্ভাব্য শত্রুতাপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, যদিও ভারত অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতি মেনে চলে, তবুও প্রতিবেশী দেশগুলোর ঘটনাবলি ভারতের জন্য কেবল ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ হয়ে থাকতে পারে না।
থারুর হুঁশিয়ার করেন, জামায়াতের নেতৃত্বে গঠিত সরকার পাকিস্তানি আইএসআই’র সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারে, যা ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তা এবং বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
নয়াদিল্লিকে সতর্ক থাকার আহ্বান
থারুর লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন একটি সতর্কবার্তা। এটি দেখিয়ে দিচ্ছে যে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভিত্তি এখন সরতে শুরু করেছে।’ তিনি ভারত সরকারকে আহ্বান জানান পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা, উদীয়মান রাজনৈতিক শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, এমনকি জামাতের মধ্যেও যারা পরিবর্তনের পক্ষে, তাদের সঙ্গে সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা যে কৌশলগত অংশীদারিত্বের ওপর এতদিন নির্ভর করেছি, তা আজ চ্যালেঞ্জের মুখে। যত দ্রুত আমরা এই বাস্তবতা মেনে নেব, তত ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারব।”