
বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, তথ্যপ্রাপ্তি এবং অনলাইনে নাগরিক অংশগ্রহণসহ ডিজিটাল স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে জরুরি হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত আইরিন খান।
গত বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট (টিজিআই) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে তিনি বলেন, ‘থিংক ডিজিটাল। আমি মনে করি সরকার সেটা ভাবছে না। কিন্তু অন্য সবাই ডিজিটাল নিয়ে ভাবছে। তাই সরকারকেও ডিজিটাল নিয়ে ভাবতে হবে—কীভাবে তারা এই ক্ষেত্রে কাজ করবে তা নির্ধারণ করতে হবে। ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে আলোচনায় আনতে হবে, মানুষকে বোঝাতে হবে যে ডিজিটাল ক্ষেত্র কতটা গুরুত্বপূর্ণ—রাজনৈতিক দলগুলোসহ।’
আইরিন খান বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্বাভাবিক ও কার্যকর গণতন্ত্র নয়, বরং একটি রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া দেশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে, যাদের ক্ষমতা সীমিত। একটি নিরাপত্তা খাত আছে—যা অস্থিরতা ও পরিবর্তনের মধ্যেও অক্ষত রয়েছে। তাহলে এ অবস্থায় নিরাপত্তা খাতে সংস্কার নিশ্চিত করতে আমরা কী করতে পারি?’
তার মতে, বর্তমান সরকারকে রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার দায়িত্ব নিরাপত্তা খাতের। কিন্তু একই সঙ্গে তাদের হাতে নজরদারি সরঞ্জাম রয়েছে, যা তাদের অন্য সবার ওপর বাড়তি সুবিধা দিয়েছে—কাকে পরবর্তী সরকারে নেতৃত্ব দেওয়া উচিত, সেটি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও।
টিজিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক সাবহানাজ রশিদ দিয়া বলেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে একই সময়ে নির্বিচারে গ্রেপ্তারও ঘটছে।
তিনি জানান, টিজিআইয়ের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে নজরদারি সরঞ্জাম কিনতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ১৯ কোটি ডলারেরও বেশি ব্যয় করেছে।
সাবহানাজ রশিদ দিয়া আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইন (বিটিআরএ) সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টিজিআইয়ের পূর্ববর্তী বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই আইন ছিল বাংলাদেশে নজরদারির অন্যতম বড় সহায়ক এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায়।
এই আইনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেটওয়ার্ক পর্যায়ে নজরদারি যন্ত্র বসাতে পারে। আবার প্রযুক্তি সরবরাহকারীদের লাইসেন্স নির্দিষ্ট অনুমতি ও প্রবেশাধিকারের ওপর নির্ভরশীল করে রাখা হয়—যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখেছি যে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে বিষয়টি কার আওতায় আছে তা পরিষ্কার নয়। এটি বিটিআরসি-র অধীনে থাকলেও এখন শোনা যাচ্ছে আইসিটির হাতে গেছে। এতে বাংলাদেশের সংবিধানের ব্যবসায়িক কার্যবিধি নিয়ে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়। দ্বিতীয়ত, যদি বিটিআরসি নিজেই তাদের নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করে, তবে সেটা কার্যত আত্ম-নিয়ন্ত্রণ হয়ে যায়, যা নিজেই সমস্যাজনক।’
এ প্রসঙ্গে আর্টিকেল ১৯-এর কর্মসূচি কর্মকর্তা ডিনাহ ভান ডের গিস্ট বলেন, নজরদারি নিজে অবৈধ নয়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো জননিরাপত্তা রক্ষা করা, অপরাধ তদন্ত করা এবং নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া।
তিনি বলেন, ‘কিন্তু যখন নজরদারি সর্বব্যাপী হয়ে ওঠে, অস্বচ্ছ থাকে এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়, তখনই এটি বিপজ্জনক সীমা অতিক্রম করে।’