
এমনটি কারও বুঝতে বাকি থাকে না যে, ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের মঞ্চে উঠলে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় হতে পারে। সহজেই যে কেউ বলে দিতে পারবেন। এক বিন্দুও অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটেনি। বাছাইয়ে বাদ। ৯ জনের মধ্যে বাংলাদেশ ৯ নম্বর স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের অ্যাথলেট নাজিমুল হোসেন রনি লড়াই করেছেন। তার টাইমিং ছিল ৫২,৪৭ সেকেন্ড। রনির ৫ নম্বর হিটে চার-পরবর্তী রাউন্ডে উঠছেন। প্রথম হয়েছেন নাইজেরিয়ার নাথানিয়েল এজকিয়েল, তার সময় ছিল ৪৮.৩৭ সেকেন্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিন কালের ৪৮, ৬৭ সেকেন্ড সময় এবং ব্রাজিলের ফ্রান্সিসকো ওয়েলহেরমে ৪৮.৬৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে তৃতীয় হয়েছেন এবং চতুর্থ হয়েও ব্রিটেনের কালমার্স অ্যালিস্টার পরবর্তী রাউন্ডে উঠেছেন ৪৮.৮৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে।
তুরস্কের নাজির ইসমাইল, বাংলাদেশের নাজিমুল হোসেন রনি, ব্রাজিলের ফ্রান্সিসকো গুয়েলহেরমে, রেইস ভিয়ানা, ব্রিটেনের কালমার্স অ্যালিস্টার, যুক্তরাষ্ট্রের ডিন কালেব, জাপানের টায়োডা কেন, নাইজেরিয়ার নাথানিয়েল এজকিয়েল, দক্ষিণ আফ্রিকার ধালামিনি সাবেলো এবং স্লোভাকিয়ার ডোমোটর প্যাট্রিক। প্রত্যেকের সেরা টাইমিং (৪৮.৩৩ কিংবা ৪৭.২৩ এর মধ্যে) কাছাকাছি হলেও বাংলাদেশের নাজিমুল হোসেন রনির টাইমিং সবচেয়ে দুর্বল, ৫২.৩৬ সেকেন্ড। ৯ জনের মধ্যে ওয়ার্ল্ড র্যাংকিয়ে সবার নাম থাকলেও বাংলাদেশ নামের স্থানটি ছিল ফাঁকা।
৪০০ মিটার হার্ডলসে ৫টি হিট হয়েছে। প্রত্যেক হিটে লড়াই করেছেন ৯ জন করে। সব মিলিয়ে ৪৫ জন। বাংলাদেশের নাজিমুল হাসান রনি ছিলেন শেষ হিটে, ৫ নম্বরে। প্রত্যেক হিটের প্রথম ৪ জন সেমিফাইনালে উঠছেন। তাদের সঙ্গে যোগ হয়েছে ৫ হিটের অবশিষ্ট ২৫ জনের মধ্যে সেরা টাইমিং করা ৪ জন। এই ৮ জন সেমিফাইনালে উঠেছেন। সেখানে বাংলাদেশের নাজিমুল হাসান রনির স্থান ৪২তম, তার পেছনে ছিলেন ম্যাকাও, সেইন্ট কিটস এন্ড নেভিস এবং ইতালির অ্যাথলেট। গতকাল জাপান ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রায় ৫০ হাজার দর্শক ছিলেন। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের একেকটি ইভেন্ট উপভোগ করছিলেন তারা। সন্ধ্যার পর রাত ৮টায় শুরু হয় ৪০০ মিটার হার্ডলস।
সবার শেষে ৫ নম্বর হিটে লড়াই করতে বাংলাদেশের অ্যাথলেট নাজিমুল হাসান রনি স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে রোমাঞ্চিত ছিলেন। এত বড় একটি ভেন্যুতে কখনো খেলা হয়নি তার। আন্তর্জাতিক মিটে অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের ভেন্যুতে এবারই প্রথম অংশগ্রহণ করলেন জাতীয় অ্যাথলেটিকসের ৪০০ মিটার ইভেন্টে স্বর্ণজয়ী রনি। সব ভালো লাগা কয়েক মিনিটের মধ্যে উধাও হয়ে যায়। স্প্রিন্ট শুরু করার ১২০ মিটার যেতে যেতেই ৮ নম্বরে লেনে থাক রনি ৯ নম্বরে চলে যান। সবার পেছনে পড়ে যান তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রনি হয়ে যান একা।
অন্যরা যখন উৎসব করছিলেন তখন ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ করলেন রনি। জাপানি দর্শক বিনয়ী, তারা সবাইকে অভিনন্দন জানান। রনিও অভিনন্দন পেয়েছেন। কিন্তু রনির তো সেদিকে নজর নেই। জায়ান্ট স্ক্রিনে তার নামের পাশে টাইমিং দেখে বুঝলেন নিজের সেরাটাও করতে পারেননি।
মিক্সড জোনে অন্যরা যখন ইন্টারভিউ দিতে ব্যস্ত, তখন গুটি গুটি পায়ে রনি এলেন, কিন্তু তার সঙ্গে কে কথা বলবেন, কারো আগ্রহ নেই। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস কাভার করতে আসা বাংলাদেশের ইত্তেফাক থেকে একমাত্র সাংবাদিক কথা বললেন। অসহায় রনির চোহরাই বলে দিচ্ছিল অ্যাথলেটিকসের দুনিয়ায় কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ।
নিজের পারফরম্যান্স সম্পর্কে রনি বললেন, ‘ভালো হয়নি, আরেকটু ভালো হওয়া উচিত ছিল। ১০ নম্বর হার্ডলটা মিলে নাই। রনি বলছিলেন অন্যরা প্রতিটা স্টেপে এগিয়ে যায়।’ হাঁপাতে হাঁপাতে রনি বললেন, ‘তাছাড়া শারীরিক গঠন, শক্তিতে অনেক এগিয়ে তারা। প্রাকৃতিকভাবেই আমরা পিছিয়ে আছি।
৪০০ মিটারের মধ্যে ১২০ মিটার পার হতেই পিছিয়ে গেলেন রনি। ‘হ্যাঁ। আসলে অনুশীলন হয়নি। জাপানে আসার আগে ভালো করে অনুশীলন করতে পারিনি। জাপানে এসেও ভালো করে অনুশীলন করতে পারিনি-বলছিলেন ঘেমে ভিজে যাওয়া হার্ডলার রনি।
রনি টোকিওতে এসে খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট করেছেন। কথাটা শুরু থেকেই বলছিলেন তিনি। গতকাল খেলা শেষ করে সেটাই আবার বললেন, ‘আজকে দুপুরে খেয়েছি একটু ভাত, সস আর পাস্তা এবং ফল। আমি বলছি না খাবারের মান খারাপ। তবে আমাদের সঙ্গে যায় না।’
রনি যেটাই বলুন। বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকসের আসল চিত্র এটাই। দেশের মাটিতে জাতীয় অ্যাথলেটিকসে স্বর্ণ জয়ের প্রতিযোগিতা হয়। আর দেশের বাইরে গেলে ৪৫ জনের বাছাইয়ে ৪২তম হতে হয়। এ যেন ‘অংশগ্রহণই বড় কথা’র মধ্যেই রয়ে গেছে বাংলাদেশ। এভাবে চলতে থাকলে ২০৭০ (রনির বিব নম্বর) সালেও ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিকস হিটে সবার শেষে থাকবে।
টোকিও শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার বাইরে বিখ্যাত পাহাড় ফুজি মাউন্ট। ঐ পাহাড়ের পেটের ভেতরে ভয়ংকর আগ্নেয়গিরীর কথা সবার জানা। শুধু জাপানীরাই নয়, সারা দুনিয়া থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসেন, ফুজি মাউন্টে উঠেন। কেউ সফল ভাবে উঠতে পারেন আবার অনেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরেন। ঠিক তেমনি ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের মত পাহাড়ে উঠতে হলে সরকার থেকে পরিকল্পনা থাকা চাই। তা না হলে রনির মতো অ্যাথলেটদের স্বপ্ন ফুজি মাউন্টের নিচে চাপা পড়বে।