
পারলেন না নোয়াহ লাইলস, পারলেন না জুলিয়ান আলফ্রেড। প্যারিস অলিম্পিক গেমস অ্যাথলেটিক যারা মাতিয়ে ছিলেন, সেই দুই মহাতারকা ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে এসে জাপানের আকাশে খসে পড়লেন। এমন দুজনের কাছেই হার মানলো যারা এবারের ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে আলোচনায় ছিলেন না। বিশ্বের দ্রুততম মানব-মানবীর খেতাব জয় করলেন জামাইকার অবলিক সেভিল এবং যুক্তরাষ্ট্রেরই নারী অ্যাথলেট মেলিসা জেফারসন। নতুন মুখ দেখলো দুনিয়া।
টোকিওর ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ১০০ মিটার নারী লড়াইয়ে মেলিসা জেফারসন উডেন সময় নিয়েছেন ১০.৬১ সেকেন্ড। জামাইকার অবলিক সেভিল সময় নিয়েছেন ৯.৭৭ সেকেন্ড। অ্যাথলেটিকসের দুনিয়াটা হলিউডের পুরোনো ছবিটাই দেখতে হবে ধরে নিয়েছিলেন।
প্যারিস অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার নোয়াহ লাইলস ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপেও স্বর্ণ জয় করবেন, এমন প্রত্যাশা সবার ছিল। হিটে অংশ নিতে লাইলস যতবার জাপান ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে এসেছেন তাকে দেখেই জাপানিরা জোরে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। এর বাইরে লাইলস একবারও লোকচক্ষুর সামনে আসেননি। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে দ্রুততম মানব হবেন, তারপর আসবেন, এমনটাই বলছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য অ্যাথলেটরা। কারণ লাইলস চেয়েছিলেন জাপানের এ মাঠেই নিজের নাম খোদাই করবেন। যেভাবে ১৯৯১ সালে ১০০ মিটারে তার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কার্ল লুইস বিশ্ব রেকর্ড করে নামটা স্টেডিয়ামের দেওয়ালে লিখে ইতিহাস হয়ে আছেন। লাইলসও সেখানে নাম লিখতে চেয়েছিলেন, হলো না। অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী লাইলস তৃতীয় হয়েছেন (৯.৮৯)।
নতুন মুখ পেয়েছে বিশ্ব। জামাইকান অ্যাথলেট, উসাইন বোল্টের উত্তরসূরি অবলিক সেভিল প্যারিস অলিম্পিকে ছিলেন অষ্টম। এক বছর পেরোতেই পুরো চিত্র বদল। যার নামগন্ধ ছিল না ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে। সবাই মাতামাতি করতেন লাইলসকে নিয়ে। হোটেল লবিতে অবলিক সেভিলকে দেখেও কেউ দেখত না। ২৪ বছরের তরুণ দেখিয়ে দিলেন বিশ্ব জয় করার মন্ত্র।
অবলিক সেভিল যখন ছুটছিলেন স্টেডিয়ামের দর্শক লাইলসকে উৎসাহ দিচ্ছিলেন। লাইলস, লাইলস বলে আওয়াজও তুললেন। কিন্তু ল্যান্ডমার্ক স্পর্শ কললেন সেভিল। নিজেকেও বিশ্বাস করতে পারছিলেন তিনি, দুনিয়াটা জয় করে ফেলেছেন। চোখ-মুখে অবিশ্বাস্য চাহনি। জায়ান্ট স্ক্রিনে তাকিয়ে নিজের নামটা সবার ওপর দেখতেই গায়ে পোশাকটা টান মেরে খুলে ফেললেন। ট্র্যাকে বসে পড়লেন। দর্শক তখন সেভিলকেও বাহ্বা দিলেন। সবচেয়ে বেশি খুশি উসাইন বোল্ট। কারণ ২০১৬-তে রিও অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জেতার পর প্রথমবার ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণ জিতলো
জামাইকা। সেই খুশিতে তার দেশের মানুষের কাছে ছুটে গেলে কোচ কর্মকর্তারা সেভিলের গালে ধরে আদর করলেন। সেভিল তখনো একটা ঘোরের মধ্যে। বার বার জায়ান্ট স্ক্রিনে চোখ রাখলেন। নিজের টাইমিংটা দেখলেন।
গত কয়েক দিন ধরেই একাধিকবার ফলস স্টার্টের ঘটনা ঘটেছে। প্যারিস অলিম্পিক গেমসের ২০০ মিটার স্প্রিন্টে লাইলসকে হটিয়ে স্বর্ণ জয় করেছিলেন বতসোয়ানোর স্প্রিন্টনার লেসিল তেবেগো। সেই স্প্রিন্টার কাল ফলস স্টার্টের কারণে বাদ পড়েছেন।
অবলিক সেভিলের সাত মিনিট আগে একই ট্র্যাকে নারী ১০০ মিটার স্প্রিন্টে নতুন মুখ পাওয়া গেল। সেন্ট লুসিয়ার মেয়েটি প্যারিস অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ জয় করেছিলেন। এবারও তিনি হিটে সেরা ছিলেন। ঠিক লাইলসের মতোই। কিন্তু নাটক যে তখনো বাকি, কে জানত। শেষ দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় রাখলেন জেফারসন উডেন। জানিয়ে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নায়ক প্রধান মুভিটা বাদ দিয়ে নায়িকা প্রধান মুভিটা দেখুন।
প্যারিস অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ জয়ী জেফারসন উডেন টোকিওতে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসে ১০.৬১ সেকেন্ড সময় নিয়ে দ্রুততম মানবী হয়েছেন। ২৪ বছর বয়সী এই সুন্দরী যা দেখালেন, সেটা হচ্ছে এরকম-এত কম সময় নিয়ে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকসের ১০০ মিটার নারী ইভেন্টে আর কেউ সেরা হতে পারেননি। সেটা তিনি শুনলেন স্টেডিয়ামে ঘোষণা দেওয়ার পর। হৃদয় জয় করা হাসি দিয়ে টিভির পর্দা মাতিয়ে দিলেন। জবাবে গ্যালারি ভরা দর্শক হাততালি দিয়ে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করলেন।
প্যারিসে স্বর্ণজয়ী জুলিয়ান আলফ্রেড ছিলেন চ্যাম্পিয়ন, তিনি কাল জেফারসন উডেনের কাছে হেরে তৃতীয় হয়েছেন (১০.৮৪ সেকেন্ড)। আসল লড়াইয়ে পারলেন না আলফ্রেড ও লাইলস।