
এশিয়ার অন্যতম উন্নত দেশ জাপান। অর্থনৈতিক এবং টেকনোলজি দিক থেকে এশিয়ার অন্য দেশগুলোর থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে দেশটি। বিভিন্ন দেশ থেকে জাপানে পড়াশোনা ও কর্ম করতে আসেন মানুষ। জাপানে উচ্চ বেতনে কাজ পাওয়া যায়। এমন লক্ষ্য নিয়ে জাপানে প্রবেশ করে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশের মানুষ।
তবে এখানে মোটা টাকা কামানো গেলেও খরচও কম না। ছোট একটা ঘর ভাড়া নিতে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫০, ৬০, ৭০ হাজার টাকাও খরচ হয়ে যায়। তাই খরচ বাঁচাতে একই বাসায় তিন চার জনকে ঠাসাঠাসি করে থাকতে হয়। তবে সবচেয়ে বেশি খরচ হয়ে যায় ট্রেন চলাচলে। এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে নামলে ৩০০ থেকে ৪০০ ইয়েন খরচ হয়ে যায়।
ওমোরাচি স্টেশন থেকে জাপান জাতীয় স্টেডিয়ামে পৌছাতে ১৪টি স্টেশন পার হতে হয়। আর খরচ হয় প্রায় ৯০০ ইয়েন। বাংলাদেশের টাকায় প্রায় ১ হাজার টাকা। দুইবার ট্রেনে উঠে অন্য কোথায় গেলে দিন শেষে দেখা যায় বাংলাদেশের টাকায় ট্রেনের পেছনে খরচ হয়ে যায় ১৪০০ টাকা। তাতে পকেট খালি হতে খুব বেশি সময় লাগে না। একবার ভুল করে ভল টেনে উঠে গেলে খরচ আরও বেড়ে যায়। তাই জাপানে যেভাবে আয় হয়, সেভাবে খরচও হয়।
গত ১০ দিনের ট্রেন চলাচলে একজন বাংলাদেশি মানুষের দেখা পাওয়া যায়নি। কোন ভাতের হোটেলে বাংলাদেশি পাওয়া গেলেও যেতে পারে। তারাও অর্থ আয়ের দিকেই ডুবে আছেন। দেশটিতে সকালে নাশতা খেতে গেলে একটা কলা ১৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। ছোট ছোট ৪ পিসের রুটির প্যাকেট কিনলে ৩০০ টাকা চলে যায়। দায়সু নামের দোকানে এক বোতল পানির দাম নেয় বাংলাদেশের টাকায় ৭৫ টাকা।
এক বেলা ভাত খেতে গেলে বাংলাদেশের দেড় হাজার টাকা খরচ। ভাতের দোকানে কথা বলতে গেলে দোকানি আলমগীর বললেন, ‘তুলনামূলক আমাদের দাম কমই। অন্য দোকানে গেলে তারা আরও বেশি নিবে।’ কী কী দেওয়া হয় খাবারে? কুমিল্লার আলমগীর বললেন, ‘আগে দেখেন তারপর বলেন। ভাত থাকবে, রুই মাছ, গরুর মাংস, ডাল এবং ভর্তা।’ তিনি জানালেন জাপান আর জাপান নেই।
করোনার লকডাউনের সময় জাপান সরকার দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সঙ্গে জানিয়েছিল কার দোকানে কত টাকা আয় হয়, ভাড়া কত। অন্যান্য খরচ কত। একটা হিসাব দিতে বলা হয়েছিল সেই হিসাব অনুযায়ী জাপান সরকার সবাইকে অর্থ বরাদ্দ দেবে। শর্ত হচ্ছে দোকান বন্ধ রাখতে হবে। সেই সুযোগ পেয়ে অনেক বাংলাদেশি তাদের ব্যয় দেখিয়েছেন তিন চার গুণ। যার আয় হতো মাসে ৩ লাখ টাকা, তিনি ব্যয় দেখিয়েছেন ৬ লাখ টাকা। জাপান সরকার তাতেই মেনে নিয়ে পুরো অর্থ দিয়েছিল বলে টোকিওর বাংলাদেশিদের সূত্রে জানা গেছে।
বড় অঙ্কের টাকা পেতে অনেক বাংলাদেশি সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। একই সঙ্গে কেউ কেউ চুপিচুপি দোকানও খোলা রেখেছেন। যারা ধরা পড়েছেন তারা বিপদে পড়েছেন তারা রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় পড়েছিলেন। আর যারা ধরা পড়েননি তারা বিত্তবান হয়েছেন।