
আবুধাবির মরুভূমি আবারও ক্রিকেটের স্রোত বয়ে আনছে। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশ। আজ রাত সাড়ে ৮টায় লিটন কুমার দাসদের প্রতিপক্ষ হংকং-যারা টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে একতরফা পরাজয় বরণ করেছে। আজকের ম্যাচে একপাশে আছে ছন্দময় আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ, অন্যপাশে আছে হোঁচট খাওয়া সংগ্রামী হংকং।
কিন্তু ক্রিকেটের সৌন্দর্যই হলো-এখানে সবকিছু আগে থেকে লেখা থাকে না বাংলাদেশি ক্রিকেটভক্তদের স্মৃতিতে এখনো টাটকা ২০১৪ সালের সেই দুঃসহ রাত। চট্টগ্রামে নিজেদের ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে হংকংয়ের বিপক্ষে দুই উইকেটে হেরে ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় যোগ হয়েছিল। সেদিনের সেই জয় নিয়ে এখনো গর্ব করে হংকং। বাবর হায়াত আর নিয়াজাকত খান এখনো আছেন সেই দলের বেঁচে থাকা যোদ্ধা হিসেবে। হয়তো আজকের মাঠেও তারা মনে মনে সেই অতীতের রং ছড়িয়ে দিতে চাইবেন।
কিন্তু এই বাংলাদেশ আর সেই বাংলাদেশ নেই। শেষ দেড় বছরে বদলে গেছে দলটির টি-টোয়েন্টি খেলার ধরন। চার-ছক্কা মারার সাহস বেড়েছে, পেস আক্রমণে ধার এসেছে, নতুন প্রজন্মের চোখে এখন আছে নির্ভীক আত্মবিশ্বাস। তানজিদ হাসান তামিম আর পারভেজ হোসেন ইমন ওপেনিংয়ে আসলেই ঝড় বয়ে যায়-সোজা উইকেটের ওপরে শট খেলতে যেন জন্মেছেন তারা।
আফগানিস্তানের ব্যাটারদের বিপক্ষে হংকংয়ের বোলাররা ছিলেন অসহায়। মিডিয়াম পেসাররা মার খেয়ে ছিটকে পড়েন, পরে স্পিনাররা খানিকটা সামাল দিলেও প্রতিপক্ষ পৌঁছে যায় ১৮৮ তে। জবাবে হংকংয়ের ব্যাটাররা যেন শ্বাসই নিতে পারেননি। একে একে সবাই সাজঘরে ফিরেছেন, কেবল বাবর হায়াত দাঁড়িয়ে থেকে করলেন কিছুটা প্রতিরোধ। তার ছক্কার ঝলক হয়তো বারবার মনে করাবে-অভিজ্ঞতা থাকলে আঘাত হানা সম্ভব।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ম্যাচ শুরুর আগেই রণকৌশল ঠিক করে ফেলেছে। প্রথম দশ ওভারের মধ্যে প্রতিপক্ষের মেরুদণ্ড ভাঙাই তাদের লক্ষ্য। তাসকিন আহমেদ নেতৃত্ব দেবেন পেস আক্রমণের, মোস্তাফিজুরের কাটার আসবে শেষ ওভারে, তরুণ তানজিম হাসান সাকিব থাকবেন ব্যাকআপে। তাদের রেখেই একাদশ সাজানো হবে, সেটি এক প্রকার অনুমিতই। এর মাঝেই পাওয়ার প্লেতে বল হাতে দেখা মিলতে পারে শেখ মাহেদীর কিংবা রিশাদের লেগস্পিন ম্যাজিকের।
বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের ব্যাটিং একসময় সমালোচনার খোরাক হতো- সিঙ্গেল ডাবলেই সীমাবদ্ধ, বড় তোলার সাহস নেই। কিন্তু সেই ধারা বদলে গেছে। ওপেনিং জুটি তামিম-ইমন এখন ছক্কা হাঁকাতে ভালোবাসেন। মাঝের সারিতে হৃদয়, শামীম, জাকের আছেন ফিনিশিংয়ের জন্য। মাঠে নামলেই তাদের ব্যাট থেকে বেরোয় আলোর মতো শট, যেন ক্রিকেট নয়-এ এক উৎসবের গান।
মরুভুমির শহরে আগের ম্যাচেই প্রমাণ হয়েছে, এখানে রান পাওয়া যাবে। কিন্তু শিশির নামলে বোলারদের পরীক্ষা দিতে হবে। বাংলাদেশের ব্যাটাররা চাইবেন প্রথমে ব্যাট করে পাহাড় সমান রান তুলতে, বোলাররা চাইবেন শুরুতেই ধাক্কা দিতে। অন্যদিকে হংকংয়ের জন্য লড়াইটা টিকে থাকার- তাদের স্পিন ত্রয়ী এহসান খান, কিঞ্চিত শাহ আর ইয়াসিম মুর্তজা যদি সুযোগ পান, তারা চাইবেন কিছুটা হলেও ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে।
আজকের ম্যাচে কাণ্ডারি হতে পারেন তানজিদ তামিম। বাংলাদেশের এই তরুণ ওপেনার সাহসী শট খেলতে ভয় পান না। প্রথম বলেই ছক্কা মারতে চান, আর সেই দুঃসাহসেই বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং মানচিত্র। অন্যদিকে বাবর হায়াত হংকংয়ের একমাত্র ভরসা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিনটি বিশাল ছক্কায় জানিয়ে দিয়েছেন, তার ব্যাটে আছে ঝড় তোলার ক্ষমতা।
এ দিকে আবুধাবিতে বাংলাদেশ এখনো জিততে পারেনি কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। তবু বাংলাদেশ যখন নামবে মাঠে, তখন শুধু প্রতিপক্ষকে হারানোই নয়, নিজেদের নতুন ছন্দ প্রমাণ করার লড়াইও থাকবে। হংকংয়ের ক্রিকেটাররা নিশ্চয় চাইবেন আবারও সবাইকে চমকে দিতে, যেন ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়। সবকিছু ছাপিয়ে মরুভূমির উত্তাপ মিশে যাবে আবুধাবির আলোয়-এশিয়া কাপে আজকের রাতে লেখা হবে নতুন গল্পের শুরু এমনটাই চান ক্রিকেট ভক্তরা।