
নারী ক্রিকেট ইতিহাসে এক অনন্য দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে ভারত। নবি মুম্বাইয়ের ডিওয়াই পাতিল স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার ৩৩৯ রানের পাহাড় টপকে ফাইনালে উঠেছে হারমনপ্রীত কৌরের দল—যা নারী-পুরুষ উভয় ক্রিকেটের বিশ্বকাপ ইতিহাসে তিনশ রানের বেশি লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম জয়।
এই ঐতিহাসিক সাফল্যের নায়িকা জেমিমাহ রদ্রিগেজ। ম্যাচের আগে মাত্র কয়েক মিনিট হাতে পেয়ে জানানো হয়, তাকে তিন নম্বরে ব্যাট করতে হবে। অথচ সেই অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্তই ইতিহাস লিখে দেয় তার ব্যাটে—১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৭ রানের ইনিংস।
এর আগে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া তোলে ৩৩৮ রান—ফোবে লিচফিল্ডের ১১৯, অ্যালিসা পেরির ৭৭ ও অ্যাশলে গার্ডনারের ৬৩ রানে ভর করে। জেমিমাহ ও হারমনপ্রীতের জুটিতে আসে ১৬৭ রান। হারমন আউট হওয়ার পর ভারতের মনে পড়ে যায় আগের তিন ব্যর্থতার গল্প—কমনওয়েলথ ফাইনাল, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেমি আর শরজাহর ধস। এবারও কি তবে সেই ইতিহাসই পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে?
তখনই নিজেকে নতুন করে গুছিয়ে নেন জেমিমাহ। পরে বলেন, ‘ওর আউটের পর নিজেকে বলেছিলাম—না, এবার শেষটা আমাকেই করতে হবে।’ ক্লান্ত শরীর, ক্র্যাম্প, চাপ—সব পেরিয়ে জেমিমাহ খেলেন দৃঢ় ইনিংস। মাঝপথে হিলির হাত ফসকে জীবন পান, কিন্তু এরপর আর সুযোগ দেননি। শেষ দিকে দীপ্তি, ঋচা ও অমনজ্যোতকে সঙ্গে নিয়ে ধীরে ধীরে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন।
শেষ রানটি আসতেই জেমিমাহ হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়েন, চোখে জল। সতীর্থদের সঙ্গে সেই আনন্দে যোগ দেন স্মৃতি মন্ধনা ও আরুন্ধতী রেড্ডি। গ্যালারিতে বাবা-মা ও কোচকে দেখে দুই হাত জোড় করে বলেন, ‘থ্যাঙ্ক ইউ।’
মাত্র এক বছর আগেও দলে জায়গা হারানো, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এক ক্রিকেটার ছিলেন জেমিমাহ। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘প্রায় প্রতিদিন কেঁদেছি। ঈশ্বর জানতেন, আমার ভেতরে কী লড়াই চলছিল।’
লিকলিকে গড়নের এই ব্যাটার শক্তি নয়, ভরসা রাখেন টাইমিং আর কৌশলে। সেঞ্চুরির পরও উদযাপন করেননি, বললেন, ‘আমার লক্ষ্য ছিল ভারতকে জেতানো, শতরান নয়।’
অবশেষে সেই লক্ষ্য পূরণ হয়েছে—জেমিমাহ রদ্রিগেজের ব্যাটে লেখা হয়েছে নারী ক্রিকেটের এক নতুন ইতিহাস।
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	