
আগামী ১৫ অক্টোবর বুধবার নয়, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হবে ১৭ অক্টোবর শুক্রবার। ওইদিন বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এই অনুষ্ঠান হবে।
জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি, বিশেষ করে গণভোটের সময় নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও সনদে স্বাক্ষরের জন্য বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট সব দল দু’জন করে প্রতিনিধির নাম ঐক্যমত্য কমিশনের কাছে পাঠিয়েছে।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ও ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে ‘জনসাধারণের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে’ জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরামে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসও আজ রবিবার রাতে ইতালির রোম যাচ্ছেন। আগামী বুধবার তার দেশে ফেরার কথা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, গতকাল যমুনায় বৈঠক শেষে ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানান- জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদেরও আমন্ত্রণ জানানো হবে এতে। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার জন্য গতকাল বিকাল পাঁচটার মধ্যে দলের দু’জন প্রতিনিধির নাম পাঠানোর জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট সব দলই কমিশনের কাছে প্রতিনিধিদের নাম পাঠিয়েছে। অন্য দলগুলো আগেই প্রতিনিধিদ্বয়ের নাম পাঠালেও বাকি ছিল ইসলামী আন্দোলনসহ তিনটি ইসলামী রাজনৈতিক দল, এই তিনটি দলও গতকাল নাম পাঠিয়েছে।
উল্লেখ্য, পরিবর্তন, পরিমার্জন ও কিছু শব্দ-বাক্যের সংশোধন করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ এর ‘চূড়ান্ত ভাষ্য’ গত ১১ সেপ্টেম্বর ৩৩টি রাজনৈতিক দল-জোটকে পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। সনদে সই করার জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর বিকাল পাঁচটার মধ্যে প্রতিটি দল-জোটকে দু’জনের নাম প্রস্তাব করে তা কমিশনের কাছে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছিল। তখনই বিএনপিসহ ১৫টি দল সনদে সই করার দু’জনের নাম প্রস্তাব করে কমিশনের কাছে তালিকা পাঠিয়েছিল। সই করার জন্য বিএনপি প্রস্তাব করেছে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের নাম।
জামায়াতের পক্ষ থেকেও সনদে স্বাক্ষরের জন্য দুজন শীর্ষ নেতার নাম পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন দলের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এতদিন ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় জামায়াতের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জুলাই সনদের স্বাক্ষরের জন্য এনসিপির পক্ষ থেকে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্য-সচিব আখতার হোসেনের নাম পাঠানো হয়েছে। এছাড়া নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার; গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান রুবেল এবং এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টির পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও জেনারেল সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ফুয়াদের নাম পাঠানো হয়েছে সনদে স্বাক্ষরের জন্য।
ঐকমত্য কমিশন গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং রাজনৈতিক দলগুলো থেকে পাওয়া অভিমতগুলো বিশ্লেষণ করে ‘খুব শিগগিরই’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নের উপায় সংক্রান্ত সুপারিশ এবং চূড়ান্ত করা জুলাই সনদ সরকারের কাছে জমা দেবে কমিশন। সুপারিশ ও জুলাই সনদের কপি দলগুলোকেও পাঠাবে কমিশন। তবে, গতকাল পর্যন্ত কমিশন সরকার বা দলগুলোর কাছে সেটি পাঠায়নি।
কমিশনের একটি সূত্র আভাস দিয়েছে- গণভোটের সময় এবং এর প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হতে না পারায় এনিয়ে কৌশলী হতে পারে কমিশন। সংসদের উচ্চ ও নিম্নকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন করা না করার বিষয়েও কমিশন কৌশলী হতে পারে। জুলাই সনদে এই দুটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু রাখা নাও হতে পারে। এমনকিও সুপারিশেও এব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু না রাখার চিন্তাও করছে কমিশন। এই দুটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।
ঐকমত্য কমিশন এর আগে সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে, দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টন হবে। এতে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) দিয়েছে বিএনপি, দলটি নিম্নকক্ষে প্রাপ্ত আসনের অনুপাতে উচ্চকক্ষে আসন বণ্টনের পক্ষে মতামত দিয়েছে। আর জামায়াতসহ কয়েকটি দল উভয় কক্ষেই পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি করছে।