
জাপানে ভালুকের হামলার ঘটনা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় দেশজুড়ে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ভালুকের হামলায় ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা ২০০০ সালের পর থেকে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন হোক্কাইদো দ্বীপে সংবাদপত্র বিলি করতে যাওয়া এক ব্যক্তি এবং ইওয়াতে অঞ্চলের এক ৬৭ বছর বয়সী বৃদ্ধ। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার এবার শিকারি নিয়োগের পরিকল্পনা করছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দেশটির পরিবেশ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, লাইসেন্সধারী শিকারি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিয়োগে বিশেষ তহবিল বরাদ্দ করা হবে, যারা আবাসিক এলাকায় ঢুকে পড়া বা মানুষের ওপর হামলা চালানো ভালুক দমন করবে। একই দিনে জাপান সরকার উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে ভালুক হামলার ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় বেশ কিছু পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছে এবং সরকার ভালুককে এখন জননিরাপত্তার জন্য ‘গুরুতর হুমকি’ বলে আখ্যায়িত করেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাপানের বিভিন্ন জায়গায় ভালুক সুপারমার্কেট, স্কুল এমনকি বাড়িঘরে ঢুকে পড়ছে বলেও জানা গেছে এবং অনেক মানুষ তাদের দৈনন্দিন কাজের সময় হামলার শিকার হচ্ছেন। দেশে দুই প্রজাতির ভালুক আছে—জাপানি কালো ভালুক এবং হোক্কাইদো দ্বীপের বড় আকৃতির বাদামি ভালুক, যা বেশি হিংস্র বলে পরিচিত। এ বছর ১০০ জনেরও বেশি মানুষ ভালুকের আক্রমণে আহত হয়েছেন। সরকার এখন পুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ভালুক মারার অনুমতি দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা দেখা গেছে উত্তরের আকিতা প্রিফেকচারে। সেখানে পাহাড়ি এলাকায় সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এই সপ্তাহে সরকার ঘোষণা করেছে, আকিতা অঞ্চলে ভালুক ধরতে ও তাড়াতে আত্মরক্ষাবাহিনী মোতায়েন করা হবে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি বলেন, ‘মানুষের জীবন ও জীবিকা এখন হুমকির মুখে।’ তবে বর্তমান আইনে সৈন্যরা ভালুক গুলি করতে পারবে না; তারা শিকারিদের সঙ্গে ফাঁদ পেতে বা মৃত ভালুক সরানোর কাজে সাহায্য করবে। আকিতা গভর্নর কেন্টা সুজুকি বলেন, মাঠ পর্যায়ে যারা কাজ করছেন তারা এখন ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন।
দেশজুড়ে শিকারির সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে, কারণ অনেকেই বয়সে বৃদ্ধ এবং ভালুক শিকার এখন আর জনপ্রিয় নয়। এর ফলে ভালুকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে এবং তারা খাবারের সন্ধানে মানুষের এলাকায় ঢুকে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আক্রমণের প্রধান কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাহাড়ে বিচগাছের ফল কমে যাওয়া। এতে ক্ষুধার্ত ভালুকগুলো গ্রামে ও শহরে ঢুকে খাবার খুঁজছে।
অন্যদিকে গ্রামীণ জনসংখ্যা কমে যাওয়াও এর একটি কারণ। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে সরকার বন্দুক ব্যবহারের নিয়ম শিথিল করেছে, যাতে মানুষ সহজে আবাসিক এলাকায় ভালুক গুলি করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	 
	