
জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক, চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং উরুগুয়ের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন।
প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ তথ্য জানান।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগদানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সংক্ষিপ্ত বৈঠকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
ড. ইউনূস ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্ধারিত দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন পরিচালনার জন্য তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অখণ্ডতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা উপস্থিত থাকবেন।
অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ বাংলাদেশের প্রবাসী সম্প্রদায়ের অবদানকে গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করে বলেন, তার নিজ নির্বাচনী এলাকাতেই বাংলাদেশি অভিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তিনি ভাষা শহীদ দিবস উপলক্ষ্যে (২১ ফেব্রুয়ারি) একটি স্মরণানুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতাও স্মৃতিচারণ করেন।
পরে প্রধান উপদেষ্টা নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমার সঙ্গে দেখা করেন, যিনি উন্নয়নের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নের জন্য জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ অ্যাডভোকেট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আলোচনায় বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে গ্লোবাল সাউথ-এ স্বাস্থ্য বীমা সম্প্রসারণের ওপর আলোকপাত করা হয়।
তারা আর্থিক খাতে জীবন ও স্বাস্থ্যবীমা, দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় এবং পেনশন স্কিমসহ বিভিন্ন উদ্ভাবন নিয়ে আলোচনা করেন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরেন। প্রফেসর ইউনূস মাতৃস্বাস্থ্যের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী ঋণসুবিধা ও ডিজিটাল স্বাস্থ্য পরীক্ষা চালুর প্রস্তাব দেন, যা গ্রামীণ নারীদের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে এবং অসংখ্য প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হবে।
বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস বৈশ্বিক ওষুধ শিল্পের পুনর্গঠনের আহ্বান জানান এবং আরও ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে পরিচালিত হওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে উৎপাদিত ভ্যাকসিন সর্বদা সাশ্রয়ী থাকবে।’
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রানি ম্যাক্সিমাকে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় নেদারল্যান্ডসের ক্রাউন প্রিন্সেস ক্যাথারিনা-আমালিয়াও উপস্থিত ছিলেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আধানোম গেব্রেইয়েসুসের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠকে উভয় পক্ষের অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন স্বাস্থ্য ইস্যু ও সাম্প্রতিক বৈশ্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
দিনের শেষভাগে মুখ্য উপদেষ্টা দুটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেন—একটি ‘ফ্যাশন ফর ডেভেলপমেন্ট’ এবং অপরটি সামাজিক উদ্ভাবনের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সহযোগিতা বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে।