
আইসল্যান্ডের পরিবেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে পোকামাকড়ের জন্য অনুকূল হয়ে উঠছে। ফলে দেশটিতে প্রথমবারের মতো পাওয়া গেল মশা। দ্য গার্ডিয়ান বলছে, চলতি মাস পর্যন্ত আইসল্যান্ড ছিল পৃথিবীর কয়েকটি স্থানের মধ্যে একটি, যেখানে কোনো মশা ছিল না। অন্যটি হলো অ্যান্টার্কটিকা।
পৃথিবী উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মশার নতুন প্রজাতিও বিশ্বজুড়ে দেখা দিচ্ছে। যুক্তরাজ্যে এ বছর মিশরীয় মশার (ডিস ইজিপ্টাই) ডিম পাওয়া গেছে, আর এশীয় টাইগার মশা (এডিস এলবোপিকটাস) শনাক্ত হয়েছে কেন্ট এলাকায়। এই দুই প্রজাতিই আক্রমণাত্মক এবং ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের মতো উষ্ণমণ্ডলীয় রোগ ছড়াতে পারে।
আইসল্যান্ডের ন্যাচারাল সায়েন্স ইনস্টিটিউটের কীটতত্ত্ববিদ মাত্থিয়াস আলফ্রেদসন এই আবিষ্কারটি নিশ্চিত করেছেন। নাগরিক বিজ্ঞানীদের একজন তার কাছে মশাগুলো পাঠালে তিনি নিজেই সেগুলো শনাক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘কিডাফেল, কিওস এলাকায় কুলিসেটা অ্যানুলাটা প্রজাতির তিনটি মশা পাওয়া গেছে— দুটি স্ত্রী এবং একটি পুরুষ। এগুলো সবই সংগৃহীত হয়েছিল ‘ওয়াইন রোপিং’-এর সময় ব্যবহৃত দড়ি থেকে, যা সাধারণত প্রজাপতি আকর্ষণে ব্যবহার করা হয়।’
এই প্রজাতির মশা ঠাণ্ডা সহনশীল এবং শীতকালে ঘরের বেসমেন্ট বা খামারে আশ্রয় নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
বিয়র্ন হ্যালটাসন, যিনি প্রথম মশাগুলো খুঁজে পান, তিনি বিষয়টি ফেসবুকের ‘ইনসেক্টস ইন আইসল্যান্ড’ গ্রুপে পোস্ট করেন। তিনি বলেন, ‘১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমি এক অদ্ভুত মাছির মতো পোকা দেখলাম লাল ওয়াইন রিবনে (পোকা ধরার ফাঁদ) । আমি সঙ্গে সঙ্গে সন্দেহ করলাম কী ঘটছে, আর দ্রুত সেটি সংগ্রহ করলাম। এটি ছিল একটি স্ত্রী মশা।’
তিনি আরও দুটি মশা ধরেন এবং সেগুলো বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে পাঠান, যেখানে সেগুলোর সঠিক প্রজাতি শনাক্ত করা হয়।
তবে বিজ্ঞানীরা অনেক দিন ধরেই ধারণা করে আসছিলেন যে, আইসল্যান্ডে একসময় মশা বাসা বাঁধবে, কারণ দেশটিতে রয়েছে প্রচুর প্রজনন উপযোগী স্থান। যেমন: জলাভূমি ও পুকুর। তবে কঠোর আবহাওয়ার কারণে অনেক প্রজাতির সেখানে টিকে থাকা কঠিন।
কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে। আইসল্যান্ডে উষ্ণতা উত্তর গোলার্ধের গড় হারের চেয়ে চার গুণ দ্রুত বাড়ছে। দেশটির হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে, আর দক্ষিণের উষ্ণ অঞ্চলের মাছ— যেমন ম্যাকেরেল— এখন আইসল্যান্ডের পানিতেও ধরা পড়ছে।