
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত এক সপ্তাহ ধরে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের বিষয়ে কঠোর ও নরম উভয় অবস্থান নিচ্ছেন। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) তিনি চীনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন, যেখানে এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের প্রতিশোধ হিসেবে চীন মার্কিন সয়াবিন কেনা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়।
এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প হুমকি দেন, তিনি চীনের সঙ্গে ভোজ্যতেল বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে পারেন। তিনি ১৪ অক্টোবর ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, চীন ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের সয়াবিন কেনা বন্ধ করেছে এবং আমাদের সয়াবিন চাষিদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে—এটি একটি অর্থনৈতিকভাবে বৈরী পদক্ষেপ।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিশোধ হিসেবে আমরা চীনের সঙ্গে ভোজ্যতেল এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক খাতের ব্যবসা বন্ধ করার কথা বিবেচনা করছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা সহজেই নিজেরাই ভোজ্যতেল উৎপাদন করতে পারি, এটি চীন থেকে কেনার প্রয়োজন নেই।’
আমেরিকান সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হলো চীন। সয়াবিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানিযোগ্য কৃষিপণ্য, যার রপ্তানি আয় প্রায় ২৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
অরাজনৈতিক কৃষক-নেতৃত্বাধীন পর্যবেক্ষক সংস্থা ফার্ম অ্যাকশন-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে এর অর্ধেকেরও বেশি—প্রায় ১২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সয়াবিন—চীন কিনেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান সয়াবিন উৎপাদনকারী অঙ্গরাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলিনয়, আইওয়া, মিনেসোটা এবং ইন্ডিয়ানা। তবে বসন্তকাল থেকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে সয়াবিন কিনছে।
অন্যদিকে, মার্কিন কৃষি দপ্তর (ইউএসডিএ)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে প্রায় ১২.৭ লাখ মেট্রিক টন ব্যবহৃত ভোজ্যতেল আমদানি করেছে, যা চীনের মোট ব্যবহৃত ভোজ্যতেল রপ্তানির প্রায় ৪৩ শতাংশ।
এর আগে ১০ অক্টোবর ট্রাম্প বলেন, চীন বিরল মাটির খনিজ রপ্তানিতে সীমাবদ্ধতা আরোপ করায় তিনি হয়তো দক্ষিণ কোরিয়া সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না। তিনি আরও হুমকি দেন যে, প্রতিশোধ হিসেবে সব চীনা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। প্রস্তাবিত ১০০ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হবে চীনা পণ্যের ওপর ট্রাম্পের আগে থেকেই আরোপিত ৩০ শতাংশ শুল্কের সঙ্গে। ১০ অক্টোবর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছিলেন, ‘বিশ্বাস করা কঠিন যে চীন এমন পদক্ষেপ নেবে, কিন্তু তারা নিয়েছে, আর বাকিটা ইতিহাস।’
তবে এই কঠোর অবস্থানের কয়েক দিন আগেই, ৬ অক্টোবর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছিলেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সঙ্গে বৈঠক করবেন এবং ‘সয়াবিন হবে আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয়।’ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য অচলাবস্থা নিরসনের আশায় থাকা আমেরিকান সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশন (এএসএ) এই সংবাদে ‘চরম হতাশা’ প্রকাশ করে।
কেন্টাকির সয়াবিন চাষি ও এএসএ সভাপতি ক্যালেব র্যাগল্যান্ড বলেন, সংস্থা আশা করেছিল এই আলোচনা একটি চুক্তিতে পৌঁছাবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন রপ্তানি আবার চীনে পুনরায় শুরু করতে পারবে। র্যাগল্যান্ড আরও বলেন, বাণিজ্যযুদ্ধ সবার জন্যই ক্ষতিকর, আর সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো গভীরভাবে হতাশাজনক। তবে দুই দিন পর, ১২ অক্টোবর ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যাল-এ লেখেন, চীনের সঙ্গে ‘সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে’ এবং ‘অত্যন্ত সম্মানিত প্রেসিডেন্ট শি কেবল খারাপ একটি মুহূর্তের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলেন।’
কিন্তু ১৪ অক্টোবর ট্রাম্প আবারও সতর্কবার্তা দেন। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেইয়ের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘আমাদের চীনের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে’ এবং কখনো কখনো সম্পর্কটা উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে ওঠে, কারণ চীন মানুষের সুযোগ নিতে পছন্দ করে—আর তারা আমাদের কাছ থেকে সুযোগ নিতে পারবে না।
সূত্র: ইউএসএ টুডে